
প্রভাতী ডেস্ক : পত্রিকায় লেখা একটি নিবন্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে করা মন্তব্যকে তার প্রতি অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি হিসেবে সাব্যস্ত করে এক অধ্যাপককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ওই শিক্ষকের নাম ড.মোর্শেদ হাসান খান। তিনি মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।বুধবার(৯ই সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
‘চাকরি থেকে অব্যাহতি’- কথার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাকরি থেকে অব্যাহতি বলতে তিনি (মোর্শেদ হাসান) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে থাকতে পারবেন না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি শেষে শিক্ষক হিসেবে যে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার কথা, তা তিনি পাবেন।
অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক। ২০১৮ সালের ২৬শে মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন তিনি। সেখানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করেন অধ্যাপক মোর্শেদ। ওই নিবন্ধে তিনি লিখেন, ‘ওই সময় (মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে) আওয়ামী লীগের নেতারা অধিকাংশই পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে যান, এমনকি বঙ্গবন্ধুও।’ পরে ওই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লেখাটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বঙ্গবন্ধু-সংশ্লিষ্ট অংশটুকু প্রত্যাহার করে নেন অধ্যাপক মোর্শেদ।
লেখাটি প্রকাশের পর বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সে সময় অধ্যাপক মোর্শেদকে বরখাস্ত করার দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও ওই লেখার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
পরে ২রা এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সব কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
ওই কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর মোর্শেদ হাসান খানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়ে আইনি সুপারিশ করতে গত বছর ৩০শে এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে দায়িত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে অধ্যাপক মোর্শেদকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দল (বিএনপি)। বুধবার (৯ই সেপ্টেম্বর) দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, শুধুমাত্র পত্রিকায় নিবন্ধ লেখাকে ইস্যু বানিয়ে ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকুরিচ্যুত করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত চাকুরিবিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আমরা মনে করি। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিশ্চিহ্ন করা যে এই সরকারের মূল লক্ষ্য এই ঘটনায় তা আবারও প্রমাণিত হল।
ফখরুল বলেন, স্বাধীন মত প্রকাশ ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সুমহান ঐতিহ্যটি নস্যাৎ করার অপপ্রয়াস চলছে। ড. মোর্শেদ হাসান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের একজন স্বনামধন্য শিক্ষক।
তিনি বলেন, একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তার একটি নিবন্ধের সূত্র ধরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তিনি পত্রিকার নিবন্ধটি প্রত্যাহার এবং ঐ পত্রিকায় বিবৃতির মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করলেও তাকে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদানে প্রমাণিত হয় যে ড.মোর্শেদ হাসান খান গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার।
ফখরুল আরো বলেন, ভিন্নমতের মানুষদের ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ৫৬ ধারার ৩ উপধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তা রাজনীতি করার তথা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে।
এদিকে অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানকে অব্যাহতি দেওয়ায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। একই সঙ্গে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।