
বিশেষ প্রতিনিধি : সচিবালয়কে একটি রাষ্ট্র পরিচালনার কেন্দ্র বলা হয়। তাই সচিবদের হতে হয় সৎ এবং আদর্শবান। কিন্তু কয়েকজন অসৎ এবং দূর্নীতিবাজ সচিবের কারণে অন্যান্য সৎ এবং আদর্শবান সচিবদেরও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। তাই দূর্নীতিবাজ সচিবদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি, তিনি সাবেক অথবা বর্তমান যাই হউক না কেন। কারণ সাবেক কতিপয় আমলা বিভিন্ন কাজে প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন।
বিভিন্ন সময় কতিপয় সচিবদের বিরুদ্ধে নানা রকম অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠলেও এবার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব অনন্ত কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে কৌশলে অসহায় লোকের জমি দখলের পাঁয়তারার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রতন দাশ ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় চান্দগাঁও মৌজার ৪০২৭ নং বিএস খতিয়ানের ১১৪০২ নং দাগের আন্দরে খরিদা সূত্রে মালিক স্মৃতি রাণী চৌধুরীর নিকট থেকে ০.০২৫৫ একর জমি (টিনশেড ঘরসহ) ক্রয় করেন। উক্ত জমি ক্রয়ের পর নামজারী জমাভাগ মামলা নং ৩-১০৯/১৮ মূলে ক্রেতা রতন দাশের নামে বিএস নামজারী খতিয়ান নং ১৩২৬৯ সৃজিত হয়। রতন দাশ উক্ত জমি ভোগ দখলে থেকে বিগত ৪ বছর যাবৎ সরকারি কর-খাজানা আদায় করে আসতেছেন। উক্ত জমিতে ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে প্ল্যান পাশ করায় এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ২০১৯ সালে কাজ শুরু করেন রতন দাশ।
কিন্তু রতন দাশের স্বপ্নের ভবন নির্মাণে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তার পাশ্ববর্তী জমির মালিক পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব অনন্ত কুমার চৌধুরী। তিনি রতন দাশকে প্রস্তাব দেন তার জমির সাথে রতন দাশের জমি একত্র করে পুনরায় সিডিএ প্ল্যান নিয়ে একসাথে ভবন নির্মাণ করার, অন্যথায় উক্ত জমি তাকে বিক্রি করে দেওয়ার। রতন দাশ উক্ত প্রস্তাবে রাজি না হলে তাকে অনন্ত কুমার এই বলে হুমকী প্রদান করেন যে, উক্ত জমিতে সে কোনদিন বাড়ী নির্মাণ করতে পারবে না। জমিতো হারাতে হবে এমনকি সারাজীবন জেলও খাটতে হবে।
যেই কথা সেই কাজ, রতন দাশের প্লটে নিজের জায়গার অংশ রয়েছে বলে নির্মাণ কাজে বাঁধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন অনন্ত কুমার চৌধুরী।পরে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে আদালতে ১৪৫ ধারায় একটি মামলা যার নং ৯০৯/১৯ দায়ের করেন। উক্ত মামলায় চান্দগাঁও সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) রতন দাশের পক্ষে আদালতে প্রতিবেদন প্রদান করেন। এরপরেও তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশ প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাকে চাপ প্রয়োগ করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে রেখেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, রতন দাশের প্লটে অনন্ত কুমার চৌধুরীর ১ ইঞ্চি পরিমাণ জায়গাও নেই। ভূমি কমিশনারের রিপোর্টেও সেটা প্রমাণিত হয়। মূলত রতন দাশের প্লটটি সস্তায় ক্রয় করার জন্য বা জোরপূর্বক দখল করার জন্য এমন হয়রানি করতেছেন। সাবেক আমলা হওয়ায় এলাকার লোকজন কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায় না। সেই সুযোগে তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন। তারা বলেন, অসহায় মানুষের উপর খুব নির্যাতন করেন সাবেক এই আমলা। আমরা প্রতিনিয়ত তার ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত থাকি। এই ধরণের দূর্নীতিবাজ লোকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এলাকার অসহায় লোকজন নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
এই ব্যাপারে রতন দাশ বলেন,১ বছর যাবত কাজ বন্ধ থাকায় আমার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। উনি (অনন্ত কুমার চৌধুরী) একজন সাবেক আমলা উনার জায়গা আমার দখলে থাকাটা তো বিশ্বাস করার মতো না, কেউ বিশ্বাসও করবে না। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, আমার জমিতে যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে আমার নামে বিএস নামজারী খতিয়ান কিভাবে সৃজন হলো, সিডি প্ল্যান কিভাবে পাশ করলো এবং সর্বশেষ ব্যাংক কিভাবে ঋণ প্রদান করলো? এই অত্যচারী সাবেক আমলার নির্যাতন ও রক্তচক্ষু থেকে বাঁচতে আমি প্রশাসন, মাননীয় ভূমি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।
ঘটনার ব্যাপারে জানার জন্য অনন্ত কুমার চৌধুরীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।