রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ৮ই জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ই জিলহজ ১৪৪৬ হিজরি

এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান- ৪নম্বর সতর্কতা সংকেত !

প্রভাতী ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ শক্তি সঞ্চয় করে এগিয়ে আসছে। রোববার দুপুরে এটি দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এটি সাগরের উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘন্টায় এর গতি গড়ে ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগ পাচ্ছে। আগামী ২০ই মে শেষ রাতে বা ২১ মে সকালে ঝড়টি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে বাংলাদেশে আঘাত হানবে কিনা সে বিষয়টি এখনই বলতে চান না আবহাওয়াবিদরা।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, সাগরে অবস্থানকালে ঘূর্ণিঝড় গতিপথ পরিবর্তন করে। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে এটি বেশ দূরে অবস্থিত। এ কারণে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে উড়িষ্যা থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত গোটা উপকূলই এর লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত এ ধরনের ঝড় উপকূলের কাছাকাছি আসার ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টা আগে প্রভাব পড়ে থাকে। সেই হিসাবে মঙ্গলবার রাতে বা বুধবার সকালে ঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব পড়তে পারে। তবে ঝড়ের কারণে ইতিমধ্যে অস্থির হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। এ কারণে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে ইতিমধ্যে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

শনিবার রাত পর্যন্ত ছিল দূরবর্তী সতর্ক সংকেত। এর পরিবর্তে স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারির অর্থ হচ্ছে- সমুদ্রবন্দর ঘূর্ণিঝড়কবলিত। সেই সঙ্গে বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনও আসেনি।

তবে বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, যদিও সরকার ঝড়টির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু শেষের দিকে ঘূর্ণিঝড়কবলিতদের সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতির পরিবর্তে এখনই পদক্ষেপ নেয়া দরকার। কেননা, এখন করোনাকাল চলছে। এসময়ে আশ্রয় কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করেই আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই করোনার কথা চিন্তা করে আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের বিশেষ বিজ্ঞপ্তির পাশাপাশি আরেকটি বুলেটিন প্রকাশ করেছে বিএমডি। এতে জানিয়েছে, দেশের ৪টি সমুদ্রবন্দরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি সবচেয়ে বেশি পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত পায়রা সমুদ্রবন্দরের কাছাকাছি অবস্থান করছে। তারপর ঘূর্ণিঝড়ের কাছাকাছি অবস্থান করা সমুদ্রবন্দর হচ্ছে বাগেরহাটের মংলা সমুদ্রবন্দর।

ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর (বিএমডি)। সংস্থাটির রোববার দুপুরে প্রকাশিত ১০ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আম্পান দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এছাড়া এটি কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘণীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

একই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ আছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। যাতে অল্পসময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। সেইসাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, এই সময়ে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা একটু কষ্টকর হবে। নারীদের জন্য এটা আরো কষ্টকর হবে। কারণ গাদাগাদি হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। আর কোন সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় পাওয়া যাবে সেটিও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

মানুষ এবং গবাদিপশুর মৃত্যুহার কমাতে গেলে সাইক্লোন শেল্টারের কোনো বিকল্প নেই। তাই পর্যাপ্ত সেন্টার খুঁজে পাওয়াটাও একটা চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, যদি শেল্টারে আসার কারণে করোনাভাইরাস কোনোভাবে সংক্রমিত হয় বা ছড়ায় তাহলে ওই এলাকায় সংক্রমণের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে, এটাও একটা ঝুঁকি। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময় মানুষের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছানো, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সেটাও নতুন চ্যালেঞ্জ আনবে। কারণ, ঘূর্ণিঝড়টি এমন একটা সময় আসছে যখন একদিকে করোনাভাইরাস মহামারী চলছে, আর অন্যদিকে চলতি বছরের বাজেটেরও শেষ মুহূর্ত চলছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে যে, সরকারের যে মজুদ বা গচ্ছিত অর্থ আছে তা অল্প কিছু মানুষের মধ্যে দেয়া যাবে। আর সেটি না হলে, নতুন বাজেটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print