নিজস্ব প্রতিবেদক : সারা দিন মামলার নথি টানা, আদালতে মামলার আবেদন লেখা ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে থেকে সারাদিন সহযোগিতা করার বিনিময়ে দিন শেষে যাতায়াত খরচ হিসেবে কিছু পারিশ্রমিক পান যে লোকগুলো, তাঁরাই শিক্ষানবীশ আইনজীবী।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পরীক্ষা দিতে হয়। তার আগে রেজিস্ট্রেশন করে বাধ্যতামূলকভাবে জ্যেষ্ঠ কোনো আইনজীবীর সঙ্গে শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করতে হয়। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এই শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। আদালত বন্ধ। কাজ নেই, তো টাকাও নেই। দেশে এমন শিক্ষানবিশ আইনজীবীর সংখ্যা এখন ৩৫ হাজারেরও বেশি।
শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুবই আর্থিক সমস্যার মধ্যে আছেন তাঁরা। বিশেষ করে শহরে যাদের বাড়ি নেই, ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাঁরাই বেশি সমস্যায় রয়েছেন। বিশেষ করে ঢাকা , চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রাজশাহীর মতো বিভাগীয় শহরের অনেক শিক্ষানবিশ আইনজীবী বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তাঁরা যেহেতু কোনো আইনজীবী সমিতির সদস্য নন, এ কারণে সেখান থেকেও কোনো লোন বা সহযোগিতা পাবেন না। তাই খুবই চিন্তায় আছেন তাঁরা।
সম্প্রতি ঢাকা আইনজীবী সমিতিসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলার আইনজীবীদের সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে তালিকাভুক্ত আইনজীবীরা আপাতত কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেলেও শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের কথা কেউ ভাবছেন না।
তবে স্বল্প আয়ের আইনজীবী বা কনিষ্ঠ আইনজীবীদের জন্য একটি তহবিল গঠন করার একটি প্রস্তাব এরই মধ্যে উঠেছে। সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক মততাজ উদ্দিন মেহেদী এই প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি গত ২৮ মার্চ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিখিত প্রস্তাব দেন।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের এই দুঃসময়ে বা ভবিষ্যতে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কনিষ্ঠতম আইনজীবী বা স্বল্প আয়ের আইনজীবীদের জন্য একটি তহবিল গঠন করা উচিত। কারণ তাঁরা জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে আদালত বন্ধ থাকায় তাঁরা দুঃসময়ে দিন কাটাচ্ছেন। এ সময় তাঁদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, এই তহবিল গঠনে দেশের প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীসহ সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য বিত্তশীলরা এগিয়ে আসতে পারেন।
ঢাকার আদালতের শিক্ষানবীশ আইনজীবী মাসুদুর রহমান বলেন, প্রতিদিন আদালতে সিনিয়র আইনজীবীকে সহযোগিতা করেন তিনি। এর বিনিময়ে সামান্য পারিশ্রমিক পান। প্রতিদিন যাতায়াত ও খাওয়া-দাওয়ার খরচ মেটানোর পর আর কিছু জমা থাকে না। আদালত বন্ধ থাকার পর থেকে তিনি বেকায়দায় আছেন। সামনে কতদিন বন্ধ থাকে আদালত তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি।
জাবের আহমেদ নামের একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী তাঁর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, শিক্ষানবীশ আইনজীবীদের জন্য কিছু একটা করুন।
নজরুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষানবীশ আইনজীবী বলেন, খুবই কষ্টে আছি। এ মাসের বাসা ভাড়া কীভাবে দেব তা ভাবতেও পারছি না।