
প্রভাতী ডেস্ক : সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরেও দেশে বেড়েই চলছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। এদিকে কর্মহীন হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ হারিয়েছে ক্রয় ক্ষমতা। ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছে অসহায় মানুষ। এমন অবস্থায় কর্মহীন ও দুস্থ-অসহায় মানুষের মাঝে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
দলটির নেতাকর্মীরা ত্রাণ কার্যক্রম আরো জোরদার করে দরজায় দরজায় পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ১৩ বছরের অধিক সময় ক্ষমতার বাহিরে থাকা দলটি ইতিমধ্যে গত ৬ সপ্তাহে রাজধানীসহ সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১২ লাখ কর্মহীন ও দুঃস্থ মানুষকে জরুরি খাদ্য সহযোগিতা দিয়েছে।
করোনায় কর্মহীন-অসহায় মানুষকে ত্রাণ প্রদানের নির্দেশনা দিয়ে দলের হাইকমান্ড থেকে নেতাকর্মীদের চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে করোনা মহামারীর এই সংকটকালে ত্রাণ তৎপরতার বিবরণ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সহস্রাধিক নেতার কাছে পৌঁছেছে এই চিঠি।
এছাড়া দেশের করোনা পরিস্থিতি, চিকিৎসা, কৃষি উৎপাদন পর্যবেক্ষণসহ দলের ত্রাণ তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিএনপি ‘জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেল’ গঠন করেছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে উপদেষ্টা ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যের এই সেল গঠন করা হয়েছে। পরে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হবে।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের ডা. হারুন অর রশীদ, ডা. আবদুস সালাম, যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামল।
এ বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ ১২/১৩ বছর সরকারের হাজারো নির্যাতনের পরেও আমরা আওয়ামী লীগ থেকে অনেক বেশি কাজ করেছি। করোনা মোকাবেলায় দলের ত্রাণ কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি রাজধানীসহ সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে তা সারাদেশে ১২ লাখ লোকের হাতে পৌঁছেছে। বিএনপি ও সকল অঙ্গসংগঠন ত্রাণ দিচ্ছে। আর জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ড্যাবের মাধ্যমে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের মধ্যে উন্নত প্রটেকশন সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যেও বিএনপির পক্ষ থেকে খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে।’
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপির জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেলের কাজ হবে করোনা পরিস্থিতি, চিকিৎসা, কৃষি উৎপাদন পর্যবেক্ষণ করা।পাশাপাশি সরকারের কোনও তথ্যের গড়মিল থাকলে তা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হবে। গত রবিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সেল গঠন ও ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।’
দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা জানান, এই দুঃসময়ে দলের নেতাকর্মীরা সাধ্যমতো দুঃস্থদের সহযোগিতা করছে। ছাত্রদলের ছেলেরা কৃষকের পাকা ধান কেটে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা পর্যবেক্ষণ করবে এই সেল।
পর্যবেক্ষণ সেলের আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘পর্যবেক্ষণ সেলের কাজ শুরু হয়েছে। দেশের করোনা পরিস্থিতি দিন-দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। ত্রাণ তৎপরতা যেভাবে চলছে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। স্থায়ী কমিটির দেড় ঘণ্টার এই বৈঠকে করোনা সংক্রমণ আরো ভয়ঙ্কর দিকে যাবে- দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের এমন মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দলের সামর্থ্য অনুযায়ী করোনা যোদ্ধা চিকিৎসক নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় পিপিই, দুস্থদের ত্রাণ ও কৃষি সামগ্রী নিয়ে পাশে থাকবে।’
এদিকে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণের অবস্থা জানতে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে বিএনপি থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন ও বিকল্প প্রার্থী হিসেবে চিঠি পেয়েছিলেন তাদেরকে এবং সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠিতে করোনা মহামারির বর্তমান সংকটকালে ত্রাণ তৎপরতার বিবরণ জানতে চাওয়া হয়েছে।
পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে যে, ‘আপনি আপনার এলাকার দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে চলমান সংকট মোকাবিলায় কি কি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন অনুগ্রহ করে সেই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নয়া পল্টনের কার্যালয়ে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা তাদের সাধ্য অনুযায়ী ত্রাণ দিচ্ছেন। আমি নিজে প্রায় প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণ বিতরণে অংশ নিচ্ছি। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা ত্রাণ বিতরণ করছেন। আমরা ত্রাণ কার্যক্রমকে আরো বিস্তৃত ও জোরদার করার জন্য নেতাদের চিঠি দিয়েছি। তারা প্রতিটি গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলাসহ শহর নগরে কর্মহীন অসহায় দুস্থদের মধ্যে নিজেদের পকেটের টাকায় সাধ্যমত ত্রাণ দিচ্ছেন। এলাকার মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে প্রথম থেকেই মানুষের পাশে থেকে তারা সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’