প্রভাতী ডেস্ক: র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা ড. বেনজীর আহমেদকে পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পুলিশের ৩০তম আইজি হিসেবে বেনজীর আহমেদের নিয়োগ সম্পর্কিত রাষ্ট্রপতির আদেশের প্রজ্ঞাপন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আজ বুধবার জারি করা হয়েছে।
তিনি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর স্থলাভিষিক্ত হবেন। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি আইজিপির দায়িত্ব নেওয়া জাবেদ পাটোয়ারীর চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ এপ্রিল।
এদিকে র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে বেনজীরের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান আবদুল্লাহ আল মামুন। একই প্রজ্ঞাপনে তার নিয়োগের কথাও জানানো হয়েছে।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বেনজীর আহমেদকে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি দায়িত্ব বুঝে নিয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান তিনি। দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রেও ব্যাপক অবদান রাখেন বেনজীর।
হলি আর্টিজান হামলায় প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ অভিযাত্রাকে একটি সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিয়ে বেগবান রেখেছেন মাদকবিরোধী অভিযান। সুন্দরবনের জলদস্যুতার অবসান ঘটিয়ে একটি স্বস্তির উপকূলীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি। সাম্প্রতিক ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান তার সাফল্যের মুকুটে আরো একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র।
নতুন আইজিপির দায়িত্ব নিতে যাওয়া বেনজীর আহমেদ মেধাবী, সৎ ও চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। ১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর গোপালগঞ্জের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্ট্যাডিজ, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা চার্লস স্ট্রার্ট ইউনিভার্সিটি ও সিঙ্গাপুরের বিশ্বব্যাংক আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পড়াশোনা করেন।
সপ্তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ ১৯৮৮ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। র্যাবের ডিজি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ছয় বছরের বেশি। তার আগে তিনি প্রায় সাড়ে ৪ বছর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় একটি নির্দিষ্ট জেলার জন্য তার পদোন্নতি হয়নি বলে অভিযোগ ছিল।
এছাড়া তিনি কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার, ডিএমপিতে ডিসি নর্থ, পুলিশ একাডেমির প্রধান প্রশিক্ষক, পুলিশ সদর দফতরের এআইজি, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার টাঙ্গাইলের কমান্ড্যান্ট, ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশনস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা বিভাগে চিফ অব মিশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট সার্ভিসেস হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। কর্মদক্ষতায় ৩ বার জাতিসঙ্ঘ শান্তিপদক অর্জন করেন।
পুলিশের সর্বোচ্চ পদক লাভ:
চাকরিজীবনে সব সময় দায়িত্ববান ছিলেন বেনজীর আহমেদ। এজন্য অর্জন করেছেন পুলিশের সর্বোচ্চ পদক পুলিশ মেডেল (বিপিএম)। ২০২০ সালে ৬ষ্ঠ বারের মতো বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম (সাহসিকতা) অর্জনের রেকর্ড গড়েন বেনজীর আহমেদ। এর আগে তিনি ২০১১, ২০১২, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে পদক পেয়েছিলেন।
ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন:
২০১৯ সালে বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ‘কনট্রিবিউশন অব বাংলাদেশ ইউএন পিস কিপিং ফোর্স টু আওয়ার ন্যাশনাল ইকোনমি’ শিরোনামে তার অভিসন্দর্ভে জাতীয় অর্থনীতিতে পুলিশ শান্তিরক্ষীদের অবদান এবং শান্তিরক্ষা মিশনে প্রায় তিন দশক দায়িত্ব পালনে লব্ধ অভিজ্ঞতা দেশের পুলিশ বাহিনী সংগঠনে ইতিবাচক পরিবর্তনে কী ধরনের ভূমিকা পালন করেছে তা তুলে আনেন বেনজীর আহমেদ। গবেষণায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের বিশ্বশান্তি রক্ষায় অনন্য অবদান রাখার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন। প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শান্তিরক্ষা মিশনের ভূমিকা বস্তুনিষ্ঠভাবে তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।
ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদান:
২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর দক্ষিণ এশীয় দাবা কাউন্সিলের প্রথম নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন বেনজীর আহমেদ। সার্ক অঞ্চলের এই ৮ দেশের দাবা কাউন্সিলরদের সর্বসম্মত ভোটে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। এরপর শতশত দাবাড়ু তৈরি করতে কাজ শুরু করেন তিনি। তার উদ্যোগে দক্ষিণ এশীয় ৮ দেশ নিয়ে ঢাকায় হয় ‘ফার্স্ট সার্ক চেজ চ্যাম্পিয়ন’ প্রতিযোগিতা। ‘বাংলাদেশ স্কুল দাবা টুর্নামেন্টের’ জন্য বেনজীর আহমেদের আহ্বানে স্পন্সর হয় আবুল খায়ের গ্রুপ।
ক্যাসিনো অভিযান:
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী ক্যাসিনো অভিযান শুরু করে র্যাব। অভিযানে সরকার দলীয় বাঘাবাঘা রাজনীতি নেতা-নেত্রী, ঠিকাদার, ক্রীড়া সংগঠকসহ বিভিন্ন ব্যক্তি আটক হয়। উদ্ধার হয় নগদ টাকা, হাজার হাজার ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং ক্যাসিনো সরঞ্জাম। এসব অভিযানের নেতৃত্ব স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী র্যাবকে দেন। বেনজিরের নেতৃত্বে সততার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব।