প্রভাতী ডেস্ক: রাজধানীর কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে সোমবার (৬ এপ্রিল) করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক জালাল সাইফুর রহমান ছিলেন চট্টগ্রামের সন্তান। নগরীর পাঁচলাইশ থানার বাদুরতলা এলাকায় তার বাড়ি।
মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। জালালের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ও ছেলে রয়েছেন সেলফ আইসোলেশনে। প্রয়াত দুদক কর্মকর্তার একমাত্র সন্তান সামিন রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ছেন। সবাইকে ঘরে থাকার আকুতি জানিয়ে সোমবার রাতে তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন—
‘আমার বাবা (জালাল সাইফুর রহমান, পরিচালক, দুদক) আজকে সকালে সাড়ে ৭টার দিকে কার্ডিয়াক এরেস্টের কারণে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। উনি গত ৩০শে মার্চ করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তবে দুঃখের বিষয় এই যে, উনার মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে লেখা প্রতিবেদনেও অনেক ভুল-ভ্রান্তি চোখে পড়ে। সে ভুল-ভ্রান্তি গুলো আমি একটু তুলে ধরতে চাইঃ
১। আমি উনার একমাত্র সন্তান ছিলাম, আমার কোন ভাই-বোন নেই।
২। আমি এবং আমার আম্মু দুইজনই পরিপূর্ণ রূপে সুস্থ আছি।
৩। আমরা গত ৭ দিন ধরে দুইজনই সেল্ফ আইসোলেশনে আছি, কোন হাসপাতালে না। আমাদের দুইজনকে আরো ৭ দিন সেল্ফ আইসোলেশনে থাকতে হবে। (সেল্ফ আইসোলেশন বলতে ঘরের মধ্যে নিজেকে আলাদা করে রাখা, কারো সাথে দেখা সাক্ষাৎ কিংবা মেলামেশা না করা।)
সেল্ফ আইসোলেশনের কারণে না বাবার জানাজার অংশ হতে পেরেছি না উনাকে কবর দেওয়ার অংশ হতে পেরেছি, এর চেয়ে কঠিন কিছু আর নেই। উনাকে আজ ৪টার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
উনি একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন। উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
আমার বাবা জীবিকার তাগিদে সরকারি আদেশ না আসা পর্যন্ত ২২শে মার্চ পর্যন্ত অফিস করেছিলেন তারপর থেকে তিনি বাসাতেই ছিলেন কিন্তু তবুও রক্ষা পাননি। তাই এখনো যারা ঘরে থাকার বিধি-নিষেধ মানছেন না, তাদের সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাই না বর্তমানে এই মূহুর্তে আমার এবং আমার পরিবারের উপর দিয়ে যা যাচ্ছে সেটা আমার শত্রুকেও মোকাবেলা করতে হোক।
বি.দ্রঃ আমার অনেক ফোন আসছে, অনেক ম্যাসেজ আসছে। তাই অনেকের ফোনই ধরতে পারিনি, অনেকের ম্যাসেজেরই সময় মত জবাব দিতে পারছিনা। সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’
দুদক কর্মকর্তা জালালের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২২ মার্চ প্রথম দফায় জ্বর আসে জালাল সাইফুরের। তখন তাপমাত্রা কম ছিল। ওই সময় জ্বর সেরে যায়। দ্বিতীয় দফায় ২৪ ও ২৫ তারিখ তিনি জ্বরাক্রান্ত হন। তখনও তার তাপমাত্রা কম ছিল। তবে জ্বরের সঙ্গে হালকা কাশিও ছিল তার। দু’দিন পর তিনি আবারো সুস্থ হয়েছে যান। তবে জ্বর নিয়ে তিনি অফিস করেন। ৩০ মার্চ তার পুনরায় জ্বর আসে। এ সময় তার তাপমাত্রা ছিল বেশি। তৃতীয় দফায় তাপমাত্রা বেশীসহ জ্বর আসলে জালাল সেদিনই আইইডিসিআরকে অবহিত করেন। আইইডিসিআর তার নমুনা সংগ্রহ করে। ওইদিন রাতেই তার রিপোর্ট কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে। এরপর জালাল সাইফুরকে কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল।