বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি

করোনা কি ? পরীক্ষা কোথায় এবং খরচ কত?

প্রভাতী ডেস্ক: দুনিয়াজোড়া সর্দি-কাশির ১০-৩০ শতাংশ হয় করোনা ভাইরাস দিয়ে। ২০০৩ সালের সার্স করোনা, পরবর্তীকালে মিডল ইস্টের মারস করোনার মতোই আরেক করোনা এবারের উহানের (চীন) নভেল করোনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অসুখটির নাম দিয়েছে কোভিড-১৯। এতদিন বাংলাদেশে কারো করোনা সংক্র’মনের সংবাদ পাওয়া না গেলেও আজ আইইডিসিআর এর তথ্যমতে প্রথমে ৩ জন( যারা এখন সুস্থ), পরে ২জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাই করোনা সম্পর্কে একটু জানা দরকার।

করোনার জীবন বৈচিত্র্য:
করোনা মূলত প্রাণীদের রোগ। সার্স করোনা ছিল কুকুরের, মার্স করোনা উটের আর নভেল করোনা বাদুড়ের রোগ। ড্রপলেটে জীবাণু ১০ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকে (ফ্লু মাত্র ৪৮ ঘণ্টা)।

কারো হলে রোগী থেকে ৬ ফুট দূরে থাকতে হবে। ৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটে (৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) বাঁচে না করোনা ভাইরাস। ব্লিচিং বা দৈনন্দিন ব্যবহারের ডিসইনফ্যাক্টান্ট করোনা ভাইরাস নির্মূল করতে পারে।

করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বারডেম হাসপাতালের মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খাজা নাজিমউদ্দিন জানান, ড্রপলেট ইনফেকশন অর্থাৎ হাঁচি-কাশি দিয়ে ছড়ায় এ রোগ। হাঁচি-কাশি কোথাও লাগলে সেখান থেকে (ফোমাইট) ছড়ায়।

মলমূত্র বা অন্য কোনো দৈহিক রসে ছড়াতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। আক্রান্ত, সন্দেহজনক আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা পর্যন্ত বিপদ নেই। অবারিত যোগাযোগ ও যাতায়াতের আজকের দুনিয়ায় সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক।

ল্যাবটেস্ট:
নিশ্চিত করার জন্য আরটিপিসিআর ভরসা। মুখের লালা, নাকের শ্লেষ্মা ও রক্তের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা যায়। নতুন করোনা ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করে মানুষের শ্বাসতন্ত্রে। আর সে কারণেই শ্বাসতন্ত্রের রোগের উপস্বর্গ দেখা দেয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) নিয়ম হল, এ পরীক্ষার জন্য রোগীর লালা, শ্লেষ্মা বা কফ সংগ্রহ করতে হবে।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করার পর তা সংরক্ষণ করা হবে স্টেরাইল টিউব বা ভায়ালে। এরপর সেই টিউব অতিমাত্রায় শীতল করে বরফের বাক্সে ভরে পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে, যাতে নমুনা নষ্ট না হয়।

নমুনা এমন ল্যাবে পাঠাতে হবে, যেখানে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে, সেই সঙ্গে আছে টেস্ট কিট। বাংলাদেশে কেবল আইইডিসিআরেই এ পরীক্ষা করা সম্ভব।

করোনা ভাইরাস, নিপা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস যে ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে, তার জৈব নিরাপত্তা বা বিএসএল মান থাকতে হয় কমপক্ষে ২। আইইডিসিআরে বিএসএল-২ এবং বিএসএল-৩ দুই মানের ল্যাবই আছে।

ল্যাবে নমুনা পৌঁছানোর পর হবে পরীক্ষার ব্যবস্থা। এ পরীক্ষার নাম আরটি-পিসিআর বা রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন। আর নমুনায় করোনা ভাইরাস আছে কি না তা বুঝতে ব্যবহার করতে হবে বিশেষ রি-এজেন্ট।

সিএনএনের প্রতিবেদনে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি নভেল করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের একটি কিট তৈরি করেছে। সেই কিট ব্যবহার করে রিয়েল টাইম আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়।

নভেল করোনা ভাইরাস যেহেতু আরএনএ (রাইবো নিউক্লিয়িক এসিড) ভাইরাস, সেহেতু পরীক্ষার জন্য প্রথমে রোগীর নমুনা থেকে সব ধরনের আরএনএ আলাদা করে ফেলা হয়। এরপর তার সঙ্গে মেশানো হয় রি-এজেন্ট এবং সত্যিকারের করোনা ভাইরাস থেকে পাওয়া জিনের উপাদান। পরে সেই মিশ্রণ পরীক্ষা করা হয় নির্দিষ্ট যন্ত্রে।

আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, রোগীর নমুনায় যদি করোনা ভাইরাস থেকে থাকে, তাহলে এ পরীক্ষায় তার সংখ্যা বাড়বে। ফলাফল আসবে ‘পজেটিভ’। আইইডিসিআর তখন সেই নমুনা পাঠাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ফের পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার জন্য।এ পরীক্ষার ফলাফল পেতে ঘণ্টা তিনেক সময় লাগে।

নমুনা আনার পর অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটা যায়। আরএন এক্সট্রাকশন করতে হয়। সেখান থেকে পিসিআর মেশিনে দিয়ে সেটা রান করাতে হয়। আরও কিছু প্রক্রিয়া শেষে পরীক্ষাটি শেষ করতে আমাদের ৩ ঘণ্টা সময় লাগে।

তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে নমুনা হাতে পাওয়ার ওপর। আরটি-পিসিআরের প্রতিটি পরীক্ষায় খরচ হচ্ছে ৫ হাজার টাকার বেশি। আপাতত এ ব্যয় সরকারই বহন করছে। তবে বর্তমানে আইইডিসিআরে প্রায় দেড় হাজার কিট মজুদ আছে। আরও কিছু কিট সংগ্রহ করা হচ্ছে, সেগুলো আসার পথে রয়েছে।

অধ্যাপক ডা. খাজা নাজিমউদ্দিন জানান, আগে পরীক্ষার ফলাফল জানতে ৩-৪ দিন লাগলেও এখন ২-৩ ঘণ্টায় পরীক্ষার ফল পাওয়া যাচ্ছে। রক্তের রুটিন পরীক্ষা করতে হবে অন্য রোগ থেকে পৃথক করার জন্য। অন্য অসুখ থাকলে জটিলতা সন্দেহ করলে তাও পরীক্ষা করা দরকার হবে।

প্রতিকার:
এখন পর্যন্ত চিকিৎসার প্রবর্তিত প্রটোকল নেই। অসুস্থ হয়ে পড়লে উপসর্গ অনুযায়ী প্র’তিকার করতে হবে। জটিলতার চিকিৎসা করতে হবে। প্যারাসিটামল, এন্টিহিস্টামিন কাজে লাগবে নিউমোনিয়া না হওয়া পর্যন্ত। পানি পান করতে হবে যথেষ্ট, খাদ্য খাওয়া ঠিক রাখতে হবে।

ভাইরাস রোগ-ঋতু বৈচিত্র্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রাদুর্ভাবের সময়কালীন নিরাপদ থাকতে পারলেই হল। হাঁচি-কাশি (ড্রপলেট ইনফেকশন) দিয়েই মূলত ছড়ায় কোভিড-১৯ নিউমোনিয়া। কারও হলে রোগী থেকে ৬ ফুট দূরে থাকতে হবে, নিজের হলে স্কুল-অফিস বাদ দিতে পারলে ভালো, বাজার-ঘাটে না গেলেই হয়। রেলিং, দরজা, গেট বা সন্দেহজনক কিছুর সংস্পর্শে এলে হাত পরিষ্কার করতে হবে, সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

সব সময় ধারে-কাছে সাবান-পানি নাও থাকতে পারে। অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে নিজেকে, প্রতিষ্ঠানকে। স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে বা করাটাকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। ধারণা করা হয় নাক-মুখের সংস্পর্শে এলেও রোগ ছড়াতে পারে।

বারবার হাত-আঙুল চোখ, নাক-মুখে লাগানোর বদ অভ্যাস বদলাতে হবে। আক্রা’ন্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা যাবে না; আসতে হলে মাস্ক পরতে হবে। ডিসপোজেবল মাস্ক একবার পরে ফেলে দিতে হবে। অন্য দেশে ভ্রমণে গেলে সতর্কতা অত্যাবশ্যকীয়।

এছাড়া জ্বর, কাশি থাকলে সম্ভব হলে ভ্রমণ বাতিল করা যেতে পারে। ভ্রমণে থাকলে এ উপসর্গের সঙ্গে শ্বাসক’ষ্ট হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, করোনা ছড়িয়েছে, এমন দেশ বা এলাকায় সম্প্রতি সফর করে থাকলে চিকিৎসককে সেই তথ্য দিতে হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print