নিজস্ব প্রতিবেদক : ভূমিমন্ত্রী জনাব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের কড়া নির্দেশের পরেও চট্টগ্রামের ভূমি অধিগ্রহণ (এল.এ) শাখার কিছু অসাধু কর্মচারী ঘুষ ছাড়া কোন কথাই বলেন না। ঘুষ দিলে তারা করেন না এমন কোন কাজ নেই। এমনকি এক মালিকের জায়গা অন্য মালিকের নামেও করে দিতে পারেন তারা। এছাড়া ঘুষ না দিলে ফাইল পড়ে থাকে বছরের পর বছর। তাই নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগীরা মোটা অংকের ঘুষ দিতে বাধ্য হন।
এই ঘুষের পরিমাণ সচরাচর ১৫% হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে ২০% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
চট্টগ্রামের এল.এ শাখার এমনই একজন অসাধু সার্ভেয়ার আল আমিনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি টাকা ছাড়া কোন ফাইল ধরেন না। যারা তাকে তার পছন্দমত ঘুষ দিতে পারেন তিনি তাদের সাথে খুব ভালো আচরণ করেন এবং তড়িৎ গতিতে সার্ভে প্রতিবেদন জমা দেন। আর যারা তার পছন্দমত ঘুষ দিতে পারেন না তাদের সাথে তিনি খুবই জঘন্য আচরণ করেন এবং ফাইল ফেলে রাখেন।
সরেজমিনে আল আমিনের এসব ঘুষ গ্রহণের তথ্য অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায় তিনি মহাব্যস্ত। ২জন লোক তার টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে আছেন, তাদেরকে তিনি খুবই আন্তরিকভাবে সেবা দিচ্ছেন। আর কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছেন, তাদের কোন কথায় তিনি পাত্তাই দিচ্ছেন না। উল্টো ধমক দিয়ে বলতে শুনা যায় তার (আল আমিন) কথা অনুযায়ী সাড়া না দিলে সারাজীবন ঘুরেও কোন লাভ হবে না। তাই এখানে ঘুরাঘুরি না করে যেন বুদ্ধিমানের মত কাজ করেন।
এইভাবে ধমক দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী বলেন, সম্প্রতি তাদের জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেই অধিগ্রহণকৃত জায়গা পরিমাপের দায়িত্ব প্রদান করা হয় সার্ভেয়ার আল আমিনকে। কিন্তু আল আমিন তাদের ফাইল আটকে রেখে লক্ষাধিক টাকা ঘুষ দাবী করতেছেন। টাকা না দিলে এই ফাইল নড়াচড়া করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। তিনি নিরুপায় হয়ে আজ অনুরোধ করতে এসেছিলেন বিল পেলে সেখান থেকে তার দাবীকৃত টাকা প্রদান করা হবে। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা, তাকে অগ্রীম টাকা দিতেই হবে।
আল আমিন বাঁশখালী ভূমি অফিসে কর্মরত অবস্থায়ও যেকোনো কাজের জন্য ঘুষ নিতেন দরদাম করে। তার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর ঘুষ গ্রহণের এক অভিযোগকারী বাঁশখালী উপজেলার মো: ওবায়দুল্লাহ নামের ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, তাদের একটি বিরোধীয় সম্পত্তির ব্যাপারে এসি ল্যান্ড মহোদয়ের আদালতে একটি অভিযোগ প্রদান করা হলে এসি ল্যান্ড মহোদয় সার্ভে প্রতিবেদন দিতে বলেন। সার্ভে প্রতিবেদন প্রদানের দায়িত্ব পান আল আমিন। তখন তিনি পরিষ্কার করে বলে দেন, রিপোর্ট পক্ষে নিতে চাইলে ৫০ হাজার টাকা তাকে দিতে হবে। তখন ওবায়দুল্লাহ তাকে বলেছিলেন সঠিক রিপোর্ট দিলেই হবে, এমনিতেই তাদের পক্ষে আসবে। তখন আল আমিন বলেন ৫০ হাজার টাকা না দিলে রিপোর্ট বিপক্ষে যাবে। এমতাবস্থায় কোন উপায় না দেখে ভুক্তভোগী ওবায়দুল্লাহ স্থানীয় ইউপি সদস্যের সম্মুখে তার হাতে ২০ হাজার টাকা দেন এবং বাকী ৩০ হাজার টাকা রিপোর্ট দেওয়ার পর প্রদানের কথা বলেন। কিন্তু সুচতুর
আল আমিন ওবায়দুল্লাহ গংদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা রিপোর্ট প্রদান করেন, যা দেখে তারা হতবাক হয়ে যান। এই ব্যাপারে আল আমিনের কাছে গেলে তিনি বলেন তাদের পক্ষে রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব হয়নি, উপরের চাপ ছিল। টাকাগুলো ফেরত দিয়ে দিবে। কিন্তু আজ-কাল করতে করতে তিনি বদলী হয়ে এল.এ শাখায় চলে আসেন। সেখানে গিয়ে তার কাছে টাকা ফেরত চাইলে তিনি ভুক্তভোগীকে চিনেন না বলে জানিয়ে দেন এবং বেশী বাড়াবাড়ি করলে তার আইনজীবী স্ত্রীকে দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকী প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, ভুয়া ভূমির মালিক বানিয়ে অধিগ্রহণের অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর দুটি মামলা করে দুদক। ওই মামলায় সার্ভেয়ার এসএম নাদিমকে ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি কারাগারে পাঠান মহানগর দায়রা জজ আদালত। মামলার অন্য আসামিরা হলেন সার্ভেয়ার মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, আবদুল কুদ্দুছ, মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম মুরাদ ও এসএম নাদিম। মামলার পর চট্টগ্রাম থেকে এসএম নাদিমকে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের এল এ শাখার বদলি করা হয়। জেলে যাওয়ার সময় সেখানেই কর্মরত ছিলেন তিনি।