প্রভাতী ডেস্ক: আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি ইতিহাসের সেই কালো দিন। ১১ বছর আগে ২০০৯ সালের এই দিনে পিলখানায় সাবেক বিডিআর ও বর্তমান বিজিবি সদর দফতরে ঘটেছিল এক মর্মান্তিক নৃশংস ঘটনা।
ঘড়িতে তখন সময় সকাল ৯টা ২৭ মিনিট। দরবার হলে চলমান বার্ষিক দরবারে একদল বিদ্রোহী বিডিআর সৈনিক অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে। বিডিআর সদস্য মঈন ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। এরপরই ঘটে যায় ইতিহাসের সেই নৃশংস ঘটনা। এরপরই বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। পুরো পিলখানায় এক ভীতিকর বীভৎস ঘটনার সৃষ্টি করে।
এ সময় তারা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সদর দফতর পিলখানায় সেদিন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা যে তান্ডব চালিয়েছিল, তা পৃথিবীর কোনো বাহিনীর বিদ্রোহের ইতিহাসে পাওয়া যায় না।
পিলখানায় নারকীয় হত্যার ঘটনায় দায়ের করা হয় পৃথক দুটি মামলা। এর মধ্যে সেনা কর্মকর্তাদের নিহতের ঘটনায় দন্ডবিধি আইনে করা হয় হত্যা মামলা। অপরটি হয় বিস্ফোরক আইনে। দুই মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে ১৫২ জনের ফাঁসির রায় দেয়া হয়। পরে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের ফাঁসি বহাল রাখা হয়। ৮ জনের ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও ৪ জনকে খালাস দেয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় ২জনের মৃত্যু হয়। খালাস পান ১২ জন আসামি।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বিস্ফোরক আইনের মামলাটি। এই মামলার আসামি ৮৩৪ জন। এর মধ্যে একজন সিভিলিয়ান, বাকি আসামিরা বিডিআরের জওয়ান। আসামিদের মধ্যে ২৪ জন মারা গেছেন। জীবিত আসামি ৭৯০ জন। পলাতক রয়েছেন ২০ জন। মামলায় ১৪৬ জন সাক্ষী দিয়েছেন। সরকার পক্ষের প্রায় ১২০০ জন সাক্ষী রয়েছে। আগামী ৮ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে শহীদ ব্যক্তিদের স্মরণে আজ মঙ্গলবার শাহাদাত বার্ষিকী পালন করবে বিজিবি। দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে, পিলখানাসহ বিজিবির সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন, বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। দিবসটি পালন উপলক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) যে সকল স্থানে রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন হয়, সে সকল স্থানে বিজিবি পতাকা অর্ধনিমিত থাকবে এবং বিজিবির সকল সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করবেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সকাল ৯টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ৩ বাহিনীর প্রধান (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একসঙ্গে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
এছাড়া বুধবার পিলখানার কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ ব্যক্তিবর্গের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।