নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া এক প্রার্থীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিজ দলের নেতাকর্মীরা। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী নুরুল হক দলের কোনো পদে না থেকেও শুধু মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলের মনোনয়ন। এর আগে ১৯৯৪ সালে তিনি বিএনপির মনোনয়নে একই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পরে আরো ৩বার তিনি ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।
বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
তালিকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসেবে হাজী নুরুল হককে মনোনয়ন দেয়া হয়। তার রাজনৈতিক পরিচয়ে বলা হয় ‘চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা’। কিন্তু ৩৫ নম্বর বক্সির হাট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের কোনো পর্যায়ে সাংগঠনিক কোনো পদ নেই হাজী নুরুল হকের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে আলহ্বাজ নুরুল হক নামে একজন উপদেষ্টা থাকলেও হাজী নুরুল হক নামে কোনো উপদেষ্টা নেই। আলহ্বাজ নুরুল হকের বাড়ি নগরের হালিশহর এলাকায়। তিনি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন নিবন্ধন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক মো. শহীদুল আলম ঝিনুকের শ্বশুর এবং কাট্টলী নূরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নন।
এদিকে আলহ্বাজ নুরুল হকের এ পরিচয় কাজে লাগিয়ে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর হাজী নুরুল হক বাগিয়ে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। অথচ তিনি ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে নির্বাচিত হন। পরে আরো তিন দফায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এদিকে কোনো পদে না থেকেও নানা কারণে বিতর্কিত এই নুরুল হক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় তোলপাড় চলছে নগর আওয়ামী লীগে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘হাজী নুরুল হক নামে যে ব্যক্তি নিজেকে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়েছেন সেটি মিথ্যা। এ নামে আমাদের কোনো উপদেষ্টা নেই।
কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মু. শফর আলী বলেন, ‘চট্টগ্রামে হাজী নুরুল হক নামে আমাদের কোনো উপদেষ্টা নেই। একজন উপদেষ্টা আছেন, তিনি হলেন আলহ্বাজ নুরুল হক। তার বাড়ি হালিশহরে। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার (বর্তমানে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন নিবন্ধন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক) শহীদুল আলম ঝিনুকের শশুর।’
৩৫ নম্বর বক্সির হাট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ চৌধুরী বাহাদুর বলেন, দলের কোনো পর্যায়ে সাংগঠনিক কোনো পদ নেই হাজী নুরুল হকের।
তিনি বলেন, ‘৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী নুরুল হক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাতো দূরের কথা তিনি কোনো ইউনিট কমিটির সদস্যও নয়। এই নুরুল হক ১৯৯৪ সালে বিএনপির পক্ষে নির্বাচন করেছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, চোরাকারবারি ও হত্যা মামলা রয়েছে।’বেশ কয়েক বছর আগে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে তার বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পাওয়া হাজী নুরুল হক বলেন, ‘ওরা সবাই মিথ্যা বলছে। প্রত্যাশীরা মনোনয়ন না পেয়ে এখন ষড়যন্ত্র করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, আমার কাছে চিঠি আছে, মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাকে উপদেষ্টা বানিয়েছেন। তার হয়েই বারবার নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছি। এখন নওফেলের (শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল) প্যানেল থেকে কাউন্সিলর মনোনয়ন পেয়েছি।’