প্রভাতী ডেস্ক: দেশের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে আওয়ামী লীগ জাতীয় কাউন্সিল করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, ‘আজকে তারা (আওয়ামী লীগ) সম্মেলন করছে, তাদের কাউন্সিল করছে। আওয়ামী লীগ তাদের দলের কাউন্সিল করবে, আমরা তাদেরকে দল হিসেবে স্বাগত জানাই। কিন্তু কিসের জন্য কাউন্সিল? কার জন্য কাউন্সিল? যেখানে বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে জোর করে ক্ষমতা দখল করে জনগণকে বাইরে রেখে অব্যাহতভাবে দেশবিরোধী গণবিরোধী সব কাজ করে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের টাকা লুটপাট করে দিনের পর দিন ক্ষমতায় বসে আছে, সেখানে একটি দল কাউন্সিল করছে তাদের।’
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আজকের বাংলাদেশ শীর্ষক সভায় আয়োজন করে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম।
আমীর খসরু বলেন, ‘কাউন্সিল মানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দলের মধ্যে থাকতে হবে, দেশের মধ্যে থাকতে হবে। তারা আজ কাউন্সিল দেশের গণতন্ত্র কিভাবে ফিরে আসবে, বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কিভাবে ফিরে আসবে তারা এই কাউন্সিলে ঘোষণা করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
যে কারণে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তা আজ অনুপস্থিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে যে কারণে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকারসহ আইনের শাসন, সামাজিক নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার সবকিছু অনুপস্থিত। আজকে মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ভোটাধিকারসহ সবকিছু যেহেতু কেড়ে নেয়া হয়েছে তাহলে বাংলাদেশে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ যে কারণে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি তার সবকিছু যেহেতু কেড়ে নেয়া হয়েছে তাহলে অবশ্যই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য, আমার আপনার বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আপনাকে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে।’
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মূল কারণ ছিল গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। গণতন্ত্রের বাহক হচ্ছে নির্বাচন, যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যে দলটিকে নির্বাচিত করেন তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন। পাকিস্তান আমলে যেটা হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত হয়েছিল, কিন্তু পাকিস্তানিরা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি। তারা নির্বাচনের যে বাহক তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তার প্রতিবাদে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিল। সেদিন ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। গণতন্ত্রের মূল বিষয় হল বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, আইনের শাসন, সামাজিক নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার। কিন্তু বাংলাদেশে আজ এসব অনুপস্থিত। তাই আমাদের এসব অধিকার ফিরিয়ে আনতে একটি মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে এবং সেই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যিনি জেলে বসে আছেন, জেলে থাকার পরেও তাদের (সরকারের) ভয় শেষ হচ্ছে না।’
খসরু বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য প্রতিটা মানুষ যারা জীবন দিয়েছেন আমরা প্রতিটি মানুষের নাম জানতে চাই। এই সম্পূর্ণ তালিকা দেশের মানুষ, এলাকার মানুষ জানতে চায়। বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বিএনপি যেদিন ক্ষমতায় আসবে সেদিন যারা এদেশের জন্য জীবনের মূল্য ত্যাগ করে প্রাণ দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন তাদের তালিকা বিএনপি প্রণয়ন করবে। তাদের তালিকা প্রণয়ন করে প্রতিটি এলাকায় স্তম্ভের মধ্যে তাদের নাম লেখা হবে। কিন্তু সরকার এই কাজটি করতে কেন এত দ্বিধাগ্রস্ত তা আমরা জানি না।’
তিনি বলেন, ‘যারা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন যারা দেশের জন্য জীবন রেখেছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করতে বলার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এজন্য আমরা তালিকা প্রকাশ করব। সরকার যদি না করে বিএনপি সেটা করবে। তারা এই তালিকা প্রকাশ না করার পেছনে কারণটা কি সেটাও কিন্তু স্পষ্টভাবে বলছে না। আমরা জানতে চাই, তারা যদি এটা করতে না চায় তাহলে দেশবাসীকে বলুক যে ‘আমরা এটা করব না’ এবং কি কি কারণে প্রকাশ করবে না সেটাও দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার করা হোক। কিন্তু বিএনপি অবশ্যই দেশের জনগণের কাছে এই তালিকা প্রকাশ করবে।’
আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিলকিস ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।