রবিবার, ১৬ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ১৬ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ১৬ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই রমজান ১৪৪৬ হিজরি

কুকুর পালন ইসলামে জায়েজ কিনা

মৌলানা মোঃ আব্দুল্লাহ-সৌদি প্রবাসী

কুকুর হলো সবচেয়ে বেশী বিশ্বস্থ এবং প্রভু ভক্ত প্রাণী।কিন্তু এই কুকুর পালন নিয়ে অনেক মত বিরোধ রয়েছে। অনেকের মতে কুকুর পালন জায়েজ আবার অনেকের মতে কুকুর পালন জায়েজ নয়।এই কারণে মানুষ অনেক দ্বন্ধে থেকে যায়।তাই কুকুর পালনের কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করা হল।

১. শিকারের উদ্দেশ্যে,ফসল হেফাজতের উদ্দেশ্যে, পাহারাদারির জন্য, ছাগল-ভেড়া ইত্যাদির হেফাজতের লক্ষ্যে, ঘরবাড়ি, দোকান ও অফিস পাহারার জন্য, অপরাধের উৎস সন্ধান ও অপরাধীকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে কুকুর লালন-পালন করা বৈধ। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : খ.১৮,পৃ.২৬৪/ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : খ.৪,পৃ.২৪২)

২. শখ করে ঘরে কুকুর রাখা, মানুষের চেয়ে কুকুরের যত্ন বেশি নেওয়া, কুকুরের সঙ্গে মানবীয় সম্পর্ক স্থাপন করা ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শিকার করা বা গবাদি পশু পাহারা অথবা শস্যক্ষেত পাহারা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া কুকুর লালন-পালন করে, প্রতিদিন ওই ব্যক্তির দুই কিরাত পরিমাণ নেকি হ্রাস পায়।’ (মুসলিম : হাদিস ১৫৭৫; তিরমিজি : হাদিস ১৪৮৭)

অন্য হাদিসে আছে, ‘এক কিরাত হলো, উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ।’ (মুসনাদে আহমদ : হাদিস : ৪৬৫০)

৩. হানাফি মাজহাব মতে, কুকুরের শরীর নাপাক নয়। তাই কুকুর কারো শরীর বা কাপড় স্পর্শ করলে তা নাপাক হবে না। তবে কুকুরের লালা নাপাক। কুকুর মুখ দিয়ে কারো জামা টেনে ধরলে যদি কাপড়ে লালা লেগে যায়, তবে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে; অন্যথায় নাপাক হবে না। (আল-বাহরুর রায়েক : ১/১০১; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৪৮; আদ্দুররুল মুখতার : ১/২০৮)

৪. ইসলামসহ আসমানি সব ধর্ম মতে কুকুরের গোশত খাওয়া হারাম।

৫. শিকারির জন্য রাখা কুকুর, পাহারার জন্য রাখা কুকুর মেরে ফেলা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম বা অবৈধ। পাগলা কুকুর, কষ্টদায়ক কুকুর মেরে ফেলা সব আলেমের মতে বৈধ। সাধারণ অবস্থায় থাকা কুকুর নিধন করা, মেরে ফেলা ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়। (সূত্র : কুয়েতভিত্তিক ইসলামী বিশ্বকোষ ‘আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়্যা’ : খ. ৩৫, পৃ. ১৩২-১৩৩)

৬. সম্ভব হলে কুকুরকে খাবার দেওয়া, পানি দেওয়া, কুকুর কোথাও পড়ে গেলে তাকে উদ্ধার করা ইসলামের দৃষ্টিতে সওয়াবের কাজ। বিশুদ্ধ হাদিসে কুকুরকে পানি খাওয়ানোর কারণে ব্যভিচারী নারীকেও জান্নাত দান করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একবার এক পিপাসাকাতর কুকুর কূপের পাশে ঘোরাঘুরি করছিল। পিপাসায় তার প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ বনি ইসরাইলের এক ব্যভিচারী নারী তা দেখতে পায়। সে নিজের পায়ের মোজা খুলে কুকুরটিকে পানি পান করায়। এ কারণে তার অতীত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৬৭)

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print