প্রভাতী ডেস্ক: এবার সুদখোরদের ধরতে মাঠে নামছে প্রশাসন। পুলিশ হেড কোয়াটার্সের নির্দেশনায় দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সুপার ও থানা অফিসার ইনচার্জরা এব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে তদারকিও শুরু করেছেন। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে চলা সারা দেশের সুদখোরদের মূলোৎপাঠনের যে তালিকা শুরু হয়েছে তা এগিয়ে চলেছে।
সুদখোরের তালিকায় ব্যক্তি কেন্দ্রিক সুদে কারবারি, মাল বাকিতে দিয়ে অতিরিক্ত সুদ আদায়কারী ব্যবসায়ী, অনুমোদনহীন এনজিও এবং সমবায় সমিতি রয়েছে। এছাড়া সরকার অনুমোদিত ব্যাংকিং সিস্টেম ছাড়া পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ও পরিচালনা কারীরা সুদখোরদের আওতায় পড়বে। যে কারণে মাথায় হাত উঠতে শুরু করেছে চিহ্নিত ও আলোচিত সব সুদে কারবারিদের।
সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে গোপনে চড়া সুদ (মুল টাকার চেয়েও কয়েকগুনের বেশি আদায়) আদায় করা চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই সরকারের এই প্রয়াস। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সরকারের অনুমোদন ছাড়াই দেশে হাজার হাজার অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান, অনুমোদনহীন এনজিও, সমবায় সমিতি সুদ আদায় করছে। এমনকি অসাধু অনেক লোক ব্যক্তি উদ্যোগে সুদের কারবার চলাচ্ছে। শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলে হাজার হাজার সুদখোর মাথা চাড়া দিয়ে দরিদ্রকে আরো দরিদ্র করছে, করছে ভূমিহীন।
চক্রবৃদ্ধির সুদ আদায় করে ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করছে এমন চিত্র চোখে পড়ছে হরহামেশাই। সরকার বা সরকারের চেকপোস্ট খ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অনুমোদন না নেয়ায় কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আবার কোনো জবাবদিহিতার আওতায় আসছেনা তারা। যে কারণে দেশে সরকারের নির্দেশনায় গত নভেম্বরে পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে সুদখোরদের তালিকা করার নির্দেশনা এসেছে পুলিশ স্টেশনগুলোতে।
সূত্রটি দাবি করেছে, বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ সুদে কারবারি সিন্ডিকেটের তৎপতা ও অত্যাচারে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। সিন্ডিকেটটি দাদন ব্যবসার নামে দরিদ্র লোকজনেকে শোষণ করছে।
অবস্থা এতটাই বেগতিক যে ২০ হাজার টাকা সুদে লাগিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়েছে, আরো ত্রিশ হাজার টাকা না দেয়ায় এক হতদরিদ্রের ভিটেবাড়ি লিখে নেয়ার নজির রয়েছে।
শতকরা ৩০ টাকা হারে সুদে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আসছে সুদখোররা। প্রতি মাসের সুদের কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলেই সুদে কারবারিরা মোটরসাইকেলে দল বেঁধে ঋণগ্রস্থ ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে চড়াও হচ্ছে। সুদ ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিনিয়িত বাড়ছে ব্যবসায়ীর সংখ্যা।
সুদে ব্যবসায়ীরা চুক্তি ভিত্তিক, দিন কিস্তি, সাপ্তাহিক কিস্তি ও মাসিক কিস্তিতে টাকা দিয়ে থাকেন। তবে মাসিক কিস্তির চাইতে চুক্তি ভিত্তিক ও দিন কিস্তিতে সুদের হার বেশি। চুক্তি ভিত্তিতে সকালে কেউ এক লাখ টাকা নিলে বিকেলে বা রাতে এক লাখে ২/৩ হাজার টাকা দিতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে সুদের হার দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে। দিন কিস্তিতে সর্বমোট মাসিক সুদের হার লাখে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। লাখে মাসিক কিস্তিতে সুদের হার ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হচ্ছে। এছাড়া অনুমোদনহীন সমবায় সমিতি, সমাজ কল্যাণ সংস্থাসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান যথেচ্ছা করছে।
সিএমপি সূত্রে জানা যায়, গত নভেম্বরে মাসে এ সংক্রান্ত তাগিদপত্র এসেছে পুলিশের কাছে। সুদখোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুমোদনহীন সকল অর্থ লেনদেন প্রতিষ্ঠান, অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে নীতি নৈতিকতা ভুলে সুদে কারবার চালিয়ে যাওয়া চক্রের বিরুদ্ধে জোরেসোরে এগুচ্ছে। সুদে কারবার সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য গ্রহণ করা হবে।