মঙ্গলবার, ১৫ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মঙ্গলবার, ১৫ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, ১৫ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি

ঢাবি ক্যাম্পাসে ভেন্ডিং মেশিনের উদ্বোধন : ছাত্রীদের সন্তুষ্টি প্রকাশ

প্রভাতী ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রীদের সুবিধার জন্য ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) উদ্যোগে ও এসিআইয়ের সহযোগিতায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের যাত্রা হলো। বুধবার(৪নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘ফ্রিডম স্যানিটারি ন্যাপকিন কর্ণার’ এর শুভ উদ্বোধন করেন।

প্রাথমিকভাবে ক্যাম্পাসের ১০টি স্থানে এই মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।ছাত্রীরা যেকোনো সময় ১০ টাকার নোট দিয়ে মেশিন থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন সংগ্রহ করতে পারবেন। ডাকসুর এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে বেশ প্রশংসিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের কাছে।

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল, কবি সুফিয়া কামাল হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ১টি করে মোট ৫টি স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ১টি, কলাভবনের ছাত্রীদের কমনরুমে ১টি, বিজনেস অনুষদের কমনরুমে ১টি, সায়েন্স লাইব্রেরিতে ১টি ও চারুকলায় ১টিসহ মোট ১০টি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।

ভেন্ডিং মেশিনের নিয়মাবলী সম্পর্কে আয়োজকরা জানান, ভেন্ডিং মেশিন থেকে যেকোনো সময় ছাত্রীরা ১০ টাকার নোট দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন সংগ্রহ করতে পারবেন। ২০০১ সালের পর থেকে প্রচলিত যেকোনো দশ টাকার নোট দিলেই একটি ন্যাপকিন বেরিয়ে আসবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৪ টাকা। দাম বৃদ্ধি পেলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা দশ টাকাই এই সেবাটি পাবেন। মেশিনের পাশেই দুটো ডিসপোজাল বিন এবং দুটো তোয়ালে দেয়া থাকবে। প্রতিটি ভেন্ডিং মেশিনের কাছে একমাস একজন মেয়ে থাকবেন, যিনি ক্রয় করা এবং যেকোনো সমস্যার সমাধান করবেন।

ভেন্ডিং মেশিনের স্যানিটারি ন্যাপকিনের উদ্যোগ ঢাবি ছাত্রীদের মাঝে বেশ প্রশংসিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন ছাত্রী। তারা জানান এর মাধ্যমে ঢাবির ছাত্রীরা বেশ উপকৃত হবেন।

এবিষয়ে বাংলা বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী ফারজানা ইসলাম বলেন, ঋতুস্রাব মেয়েদের জীবনে একটি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক ঘটনা। এখনো অনেকে ওষুধের দোকানে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গেলে লজ্জা পান। আবার অনেক সময় দেখা যায়, এসব বিক্রি করা হয় কাগজে মুড়ে কিংবা কালো পলিথিনে ভরে। অবস্থাটা এমন হয়েছে যে, মনে হয় যেন কোনো নিষিদ্ধ জিনিস বেচা-কেনা হচ্ছে। ভেন্ডিং মেশিনে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থাটা ডাকসুর অভিনব উদ্যোগ।তার জন্য ডাকসুকে ধন্যবাদ জানাই।

শাকিলা ইফফাত নামের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আরেক ছাত্রী বলেন, পিরিয়ড চলাকালীন ক্যাম্পাসে এসে নানা সমস্যায় পড়তে হয় ছাত্রীদের। হাতের কাছে ন্যাপকিন না থাকার ফলে এসব সমস্যা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের জন্য ভেন্ডিং মেশিন দিয়ে ডাকসু একটি সুন্দর ও বাস্তবমুখী চিন্তা এবং তার বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। আমাদের চিন্তা এবার দূর হলো।প্রয়োজনে হলে খুব কাছ থেকে আমরা এখন ন্যাপকিন সংগ্রহ করতে পারবো।

ভেন্ডিং মেশিন সম্পর্কে জানতে চাইলে ডাকসু’র সদস্য তিলোত্তমা শিকদার বলেন, আমরা ডাকসু নির্বাচনের ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম ছাত্রীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের ব্যবস্থা করব। পরে আমরা এটার জন্য কাজ করেছি। বিজনেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম স্যার এই ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তার সহযোগিতায় এসিআই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেন্ডিং মেশিনগুলো স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

ড.শিবলি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের সুবিধার ভিত্তিতে নির্ধারিত ১০টি স্পটে এখন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। সমাজকল্যাণসহ আরো কয়েকটি স্থানে ভেন্ডিং মেশিন বসাতে আমি এসিআইয়ের কাছে আবেদন করেছি। তারাও আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, আগে যে ১০টি মেশিন বসানো হয়েছে সেগুলো ভালোভাবে রান করুক, তারপর বাকিগুলোও বসানো হবে।

ভেন্ডিং মেশিন সম্পর্কে ডাকসুর সহ-সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন বলেন, যে স্বপ্ন প্রতিনিয়ত আমাদের তাড়া করে বেড়ায়, সেটি হলো শতবর্ষের প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা এ ক্যাম্পাসটাকে মেয়েদের জন্য শতভাগ উপযোগী করে গড়ে তোলা। শুধু স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিনের ব্যবস্থা নয়, আমরা চাই লিঙ্গ বৈষ্যমের প্রত্যেকটি চিহ্ন দুমড়ে মুচড়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিতে। নারী-পুরুষ পরিচয়ের উর্ধ্বে মানুষ হিসেবে সবাই বাঁচতে শিখুক, স্বাধীন জীবন-যাপন করুক, তথাকথিত সামাজিক বিধিনিষেধের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলুক-এটিই আমাদের চাওয়া।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন ও ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শিবলী  রুবাইয়াতুল ইসলাম।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print