প্রভাতী ডেস্ক: প্রতিনিয়ত হাতুড়ি পেটানোর শব্দ ভেসে আসে যশোরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গ থেকে। মর্গে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মরদেহের মাথা ভাঙ্গা হয়, এমনকি ছেনি দিয়ে লাশ কেটে করা হয় ময়নাতদন্ত। আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি না থাকায় এভাবেই মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। আশপাশের লোকজনের কাছে হাতুড়ির শব্দ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, মর্গে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মরদেহের মাথা ভাঙ্গার এমন শব্দ প্রায়ই হয়। এছাড়া মাঝে মাঝে মরিচা ধরা ছেনি দিয়েও মাথার খুলি খোলা হয়। ময়নাতদন্ত কাজে ব্যবহৃত ছুরিগুলোও ভোতা। দেখলে মনে হবে তাতে দীর্ঘদিন শান দেয়া হয়নি।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, গত বছর আধুনিক যন্ত্রপাতির চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু এখনো সাড়া মেলেনি।
জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসাসেবা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে মান্ধাতা আমলের সকল যন্ত্রপাতি। বর্তমানে চলছে ডিজিটাল মেশিনে কার্যক্রম। কিন্তু হাসপাতাল মর্গের দিকে কর্তৃপক্ষের নজর নেই। তাছাড়া মর্গে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় মরদেহ টেবিল ও ফ্লোরে রাখা হয়। মর্গে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো স্টাফ বা লোকবলও নেই। অথচ জেলা বা উপজেলায় হত্যা বা রহস্যজনক মৃত্যু হলে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠানো হয় এই মর্গে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে (১৭ নভেম্বর পর্যন্ত) এই মর্গে অর্ধশতাধিক লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানান, নামেই এখানে মর্গ। কোনো ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নেই। অনেক পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করতে হয়। লাশ সংরক্ষণ করার ফ্রিজটিও মাসের পার মাস অকেজো হয়ে আছে। এক কথায় হাসপাতাল মর্গের দিকে কর্তৃপক্ষের খেয়াল নেই। মরদেহ কাটার কাজে নিয়োজিত লক্ষণ জানান, মর্গে যন্ত্রপাতির বেহাল অবস্থা। ফলে গায়ের জোরে মরদেহ কাটতে হয়। তাছাড়া মর্গের ভেতর পানির ট্যাবগুলোও নষ্ট।
এই ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু বলেন, আগে হাসপাতাল মর্গে নানা সমস্যা ছিল। এখন সেখানে কয়েকটি নতুন এসি লাগানো হয়েছে। মর্গের অবকাঠামোও উন্নত হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতির চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন শুধু অনুমোদনের অপেক্ষা।