শনিবার, ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি

সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা আর নেই!

প্রভাতী ডেস্ক: অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা আর নেই। স্থানীয় সময় রবিবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশ সময় সোমবার (৪নভেম্বর) দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের বিশেষায়িত হাসপাতাল মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। মৃত্যুকালে তার পাশে ছিলেন স্ত্রী ইসমত আরা, ছেলে ইশরাক ও মেয়ে সারিকাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।

সাদেক হোসেন খোকা কিডনির ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মী ও অনেক সাধারণ প্রবাসী গভীর রাতে হাসপাতালে ছুটে যান। তারা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

গত ১৮ অক্টোবর মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় তাকে ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত এক সপ্তাহ তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন। চিকিৎসকেরা সাদেক হোসেন খোকার সুস্থ হয়ে ওঠার সব রকম আশা ছেড়ে দেন। এ কারণে হাসপাতালে যত লোক তাদের প্রিয় নেতাকে দেখতে গিয়েছেন সবার সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। সবার কাছেই তিনি দোয়া চেয়েছেন।

জানা যায়, সাদেক হোসেন খোকার অন্তিম ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর তার লাশ যেন বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২০১৭ সালে নবায়নের জন্য নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে পাসপোর্ট জমা দিলেও অদ্যাবধি ফেরত না পাওয়ায় গত ১লা নভেম্বর স্ত্রী ইসমত আরা কনস্যুলেটে আবেদনও করেন। কিন্তু কনস্যুলেট এ ব্যাপারে জানিয়েছে যে পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়টি সরকারের ওপর মহলের সিদ্ধান্তের উপর। তবে কনস্যুলেট যে কোনো বাংলাদেশির দেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে পারে।

সাদেক হোসেন খোকার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ট ব্যবসায়ী মাহমুদ হোসাইন বাদশা গণমাধ্যমকে জানান, হাসপাতালে সাদেক হোসেন খোকাকে চিকিৎসকেরা তিন সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তিনি জানান, স্ত্রী ইসমত আরা এবং বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনসহ পরিবারের সদস্যরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাবার পর সাদেক হোসেন খোকার লাশ হিমঘরে রাখা হবে। স্থানীয় সময় সোমবার আছরের নামাজের পর জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে তার প্রথম নামাজে জানাযা হতে পারে বলে জানান মাহমুদ হোসাইন বাদশা।

এদিকে, রবিবার রাতে সাদেক হোসেন খোকাকে হাসপাতালে দেখতে যান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। এ সময় হাসপাতালের বিছানায় অসুস্থ এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দেখে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি। এজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান সিদ্দিকুর রহমান।

ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ মে মাসে সাদেক হোসেন খোকা স্বপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে যান। রাজধানীর বনানী সুপার মার্কেটের কার পার্কিংয়ের ইজারা দুর্নীতির মামলায় গত বছরের ২৮ নভেম্বর ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ মিজানুর রহমান খান খোকাসহ ৪জনকে ১০ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। মামলা ও হুলিয়া মাথায় নিয়ে হলেও দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল ছিলেন তিনি। কিন্তু মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়ে অবশেষে লাশ হয়েই ফিরছেন একাত্তরে রণাঙ্গণের এই গেরিলা যোদ্ধা।

সাদেক হোসেন খোকা ১৯৫২ সালের ১২ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মাওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করে পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন এবং বিএনপির ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি হন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সাদেক হোসেন খোকা ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে হারিয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তার দল সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি সরাসরি নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print