
আশেক এলাহী: রাজনীতি, অর্থনীতি, গণমাধ্যম, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে নিজেদের সরব উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন বাংলাদেশের নারীরা। ধাপে ধাপে বাধা অতিক্রম করে প্রতিবছর উন্নয়ন সূচকে বিজয় নিশান উড়িয়ে দিচ্ছেন তারা।যথাযথ শিক্ষা ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। লিঙ্গ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে অবস্থান করতেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের হিসেব অনুযায়ী ১৪৪টি দেশের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ।
সম্ভবত বাংলাদেশের সংসদই বিশ্বের একমাত্র সংসদ যেখানে স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা চার জনই নারী।
বাংলাদেশে সশস্ত্র ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায়ও নারীদের সরব উপস্থিতি, বিমান চালনা, সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রাষ্ট্রদূতের মতো উচ্চ পদগুলোতে বাংলাদেশের নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের নারীদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহন, এভারেস্ট জয় ও দেশে-বিদেশে খেলাধুলাতেও নারীর অবদান অসামান্য।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের ত্যাগ ও সংগ্রাম এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনঃগঠনে নারীদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।
নারী শিক্ষার প্রসারে বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যাচ্ছেন। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা, ২৮ লাখের বেশি শিশুর জন্য স্কুল খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বিনামূলে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা, ২৩ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি ও মেধাবৃত্তি দেয়া হয়।নারীদের কারিগরী শিক্ষায় বিকশিত করতে ৬টি মহিলা কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যেগ হাতে নেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা ও গ্রামের নারীদের জীবন-মান উন্নয়নে নারী শিক্ষা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। নারীর উপর পারিবারিক নির্যাতন ও শোষণের ঘটনা কমে গেছে।নারী শিক্ষার প্রসার ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বাল্য বিবাহ কমাতেও ভূমিকা রাখছে সরকার।
বর্তমানে শতভাগ শিশু স্কুলে যায়, যাদের মধ্যে মেয়েরাই বেশি।
বিদ্যালয়ে মেয়ে ছেলে অনুপাত ৫৩:৪৭, যা ২০০৯ সালে ছিল ৩৫:৬৫। গত নয় বছরে সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৩ শতাংশ হয়েছে।
দেশের প্রাথমিক শিক্ষক পদের ৬০ ভাগ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত। এছাড়া প্রত্যেক জেলায় তথ্য-প্রযুক্তিসহ নারীর ক্ষমতায়নে বিভিন্ন প্রকল্প চালু হয়েছে।
নারী উন্নয়নে ২০১০ সালের নারী নীতি প্রণয়নের জন্য সংসদ ও স্থানীয় সরকারে নারীদের সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছে।
এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিনা জামানতে ঋণসহ নানা সুবিধা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অবদান অকল্পনীয়।বর্তমানে দুই কোটি নারী কৃষি কাজে এবং পোশাক শিল্পে ৪৫ লাখ চাকুরিজীবির ৮৫ শতাংশই নারী।
দেশে গুণগত শিক্ষার মান বাড়ানোর ওপর সরকার গুরুত্বারোপ করছে ‘ইনক্লুসিভ’ উন্নয়ন ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সবার জন্য শিক্ষা বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য।