এম জিয়াউল হক: গত ১১ই জুলাই চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের মুসলিম শিক্ষার্থীদেরকে খিচূড়ী/প্রসাদ বিতরণ করে ‘রাম রাম’ এবং ‘হরে কৃষ্ণ’ শ্লোক জপ করিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংঘটন ইস্কনের কতিপয় সদস্য। এতটুকুতেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, এগুলি আবার ভিডিও করে এবং ছবি তুলে তাদের Iskcon Food for life- Chittagong পেইজে শেয়ার করছে। ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে স্কুলের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রসাদ খাইয়ে হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন শ্লোগান এবং কৃষ্ণ ও রামের নাম জপ করাচ্ছেন ২জন ইস্কন সদস্য। তারা পেইজে ছবি/ভিডিওর ক্যাপশনে লিখেছে এই ধরণের কর্মকান্ড ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখতে ধনাঢ্য হিন্দুদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবি এবং ভিডিও অনুযায়ী চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়স্থ ইস্কন মন্দির সংলগ্ন প্রবর্তক বিদ্যাপীঠ, বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পশ্চিম বাকলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রসাদ/খিচূড়ী বিতরণ করে হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন শ্লোক পাঠ করানো হয়।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে পশ্চিম বাকলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমিত সেন বলেন, যেইদিন প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে সেইদিন তিনি স্কুলে ছিলেন না, মাসিক মিটিংয়ে ছিলেন। তবে সরল বিশ্বাসে দরিদ্র বাচ্চাদের একবেলা আহারের বিষয়টা বিবেচনা করে তিনি অনুমতি দিয়েছিলেন বলে জানান। ইস্কন সদস্যরা কুমতলবে এসব করবে সেটা তিনি ভাবতে পারেন নি। আগামীতে এরকম কোন কাজে অনুমতি দিবেন না বললেও জানান তিনি। এই ব্যাপারে হেফাযতে ইসলামের কয়েকজন নেতা এবং এনএসআই কর্মকর্তারাও যোগাযোগ করতেছেন বলে জানান তিনি।
ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাছির উদ্দীন বলেন, হঠাৎ করে ইস্কন সদস্যরা অনুমতি চাওয়ায় তিনি লজ্জায় পড়ে অনুমতি দিয়েছেন। তবে মুসলিম শিক্ষার্থীরা খাওয়ার খান নি এবং হিন্দুত্ববাদী শ্লোকও পাঠ করেন নি। তিনি আরো বলেন, পুলিশ তদন্ত করেও সত্যতা পায় নি।
সুশীল সমাজের লোকজন মনে করেন, মূলত মুসলমানদের অসাম্প্রদায়িকতার সুযোগ নিয়ে হিন্দুত্ববাদ কায়েমে ব্যাস্ত চট্টগ্রাম নগরীর উগ্রপন্থী হিন্দুরা। আসলে মুসলমানদের নিরবতায় আর ঈমানের কমজুরির কারনে আজকে এই দিন দেখতে হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। অনেক শিক্ষার্থীদের দেখে মনে হচ্ছে তারা মুসলমান। তাই প্রথমত খাদ্যসামগ্রী ধর্মীয় শরীয়াহ অনুসারে হালাল ছিল কিনা এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।
স্কুল কর্তৃপক্ষ এভাবে খাওয়ানোর অনুমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে নিয়েছেন কিনা সেটা আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তেমনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অভিভাবকদের অনুমতি নিয়ে তাদেরকে কৃষ্ণ ও রাম নাম জপ করানো হইয়াছে কিনা।
মানবাধিকার কর্মীরাও এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অনুমতি না নিয়ে এসব করা হয় তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জঘন্য অপরাধ করেছে। কারণ প্রকারান্তরে এটা কোমলমতি শিশুদের ধর্মান্তরিত করার প্রয়াস। এবং একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েকে এভাবে ধর্মান্তরিত করার প্রচেষ্টা মানবাধিকার লঙ্ঘন, দেশের সংবিধান লঙ্ঘন, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেওয়া এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের উস্কানী দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।হয়তো অভিভাবকরা এসব ঘটনার কথা জানেনে না। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। যদি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়া এসব করা হয়ে থাকে তাহলে সামাজিক ও আইনানুগভাবে কঠোরভাবে এসব কাজের জন্য স্কুল কতৃপক্ষ এবং ইস্কনের মোকাবিলা ও প্রতিবাদ করা অতীব জরুরী। প্রশাসনের উচিৎ এসব বিষয়ে তদন্ত করা এবং প্রয়োজনে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
বিশ্বমোড়ল বৃটেনের স্কুল গুলোতে বেশীরভাগ শিক্ষার্থীরা ফ্রি লাঞ্চ খায়। কিন্তু অভিভাবকদের পছন্দ মতো হালাল, ভেজেটেরিয়ান, ভেগান ইত্যাদি খাদ্য সরবরাহ করা হয়। স্কুল কতৃক আয়োজিত বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কারো ছেলেমেয়ে অংশগ্রহণ করবে কিনা তার অনুমতি অভিভাবকদের থেকে স্কুল কর্তৃক নিয়ে থাকে। অভিভাবক অনুমতি না দিলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে অনুষ্ঠানে যোগদান করাবে না। কেউ অনুমতি না দিলে তার ছেলে বা মেয়েকে খোদ খ্রীস্টান ধর্মের কোন অনুষ্টানেও যোগদান করানোর দৃষ্টতা দেখাবে না স্কুল কর্তৃপক্ষ।
অথচ ভাবতেও অবাক লাগে তথাকথিত ৯৫% মুসলমান জনগোষ্ঠীর দেশে যে শহর ১২ আউলিয়ার জন্মভূমি, যে শহরে হেফাজতে ইসলামের হেড কোয়ার্টার সেই শহরের স্কুলে কোমলমতি শিশুদের খাবারের লোভে ফেলে ভিন্ন ধর্মের দেবতাদের নাম জপ করানো হয়।