প্রভাতী ডেস্ক: গত এপ্রিলে ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে মাদরাসার একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর ঘটনাটিকে যেমন আত্মহত্যার চেষ্টা বলে চালানোর চেষ্টা করেছিল একটি মহল তেমনি রিফাত খুনের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী মিন্নিকে দোষারোপ করার চেষ্টা চলছে।
রিফাত শরীফকে খুনের যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেখানে দেখা গেছে, তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ঘাতকদের ঠেকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। একজনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলে আরেকজন এসে স্বামীকে কোপাচ্ছে। কোনোভাবেই ঘাতকদের আটকাতে পারছিলেন না তিনি। স্বামীকে বাঁচাতে বারবার চিৎকার করে লোকজনকে ডাকলেও কেউ এগিয়ে যায়নি। শত শত মানুষের সামনে ঘাতকরা রিফাত শরীফকে রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
রিফাত শরীফ খুনের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা সুমন দেবনাথ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাস, পোস্ট ও ছবি প্রকাশ করেছেন। একটি পোস্টে তিনি রিফাত হত্যায় স্ত্রী মিন্নিকে ‘মূল ভিলেন’ হিসেবে ইঙ্গিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বিভিন্ন খবর ও মিডিয়াতে যাকে এখন হিরো বানানো হচ্ছে মূল ভিলেন সে নিজেও হতে পারে, রিফাত শরীফের বন্ধুদের থেকে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে এটাই বোঝা যায়। ’
ঘটনার পর রিফাতকে নিয়ে হাসপাতাল যাওয়া বা নয়নের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে একটি মহল নানা কথা বলছে। বৃহস্পতিবার খুনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মিন্নি বলেছেন, বিয়ের পর নয়ন তাঁকে উত্ত্যক্ত করে আসছেন। এমনকি বিষয়টি পরিবারকে জানাতে নিষেধ করে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন। রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নয়ন নামের এক যুবক তাঁর ছেলের বউকে নিয়ে ফেসবুকে আজেবাজে কথা লিখছে।
মিন্নি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘রক্তাক্ত অবস্থায় আমি রিকশায় করে রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। রিফাতের বন্ধু মনজুরুল আলম জন ঘটনার পরপরই হাসপাতালে ছুটে আসেন। আমি তখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে দেখি রিফাত আমার পাশে নেই। তাকে আমার বাবাই বরিশালে নিয়ে যায়। ’ তিনি আরো বলেন, ‘বিকেলে স্বামীর লাশ দেখতে শ্বশুরবাড়ি যাই। তখন জনের কয়েকজন বন্ধু আমাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার দিকে তেড়ে আসে। একপর্যায়ে আমি আমার চাচা শ্বশুরের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিই। আমার অগোচরেই রিফাতের দাফন সম্পন্ন হয়। আমি শেষ দেখাটাও দেখতে পারিনি। এমনকি আমাকে ওর কবরে মাটি পর্যন্ত দিতে দেয়নি। ’
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘রিফাত বেকার ছিল। প্রথমে আমরা বিয়েতে রাজি ছিলাম না।তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাই আমার ভাই সালেহ ও রিফাতের বাবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল পারিবারিকভাবেই ওদের বিয়ে হয়। ’ তিনি আরো বলেন, ‘মিন্নিকে তার শ্বশুরবাড়ির সবাই ভালবাসত। ও যেভাবে রিফাতকে সেভ করছিল, তা দেখারর পরেও কেউ কেউ বাজে মন্তব্য করছে। এটা খুবই বেদনাদায়ক। ’