প্রভাতী ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের সেমিফাইনালে ফিলিস্তিনের কাছে ২-০ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার কক্সবাজারের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে এই ম্যাচ অনুষ্টিত হয়। ম্যাচের দুই পর্বে দুটি গোল করেছে তারা। ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালে ফিলিস্তিন মুখোমুখী হবে তাজিকিস্তানের।
এই ম্যাচে সমান তালে লড়াই করেও গোল আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ। বেশ কিছু সুযোগ নষ্ট করেছে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডরা। প্রথমার্ধে ফিলিস্তিনের একটি গোলে পিছিয়ে চাপে পড়ে লাল-সবুজরা,দ্বিতীয়ার্ধের শেষ মুহুর্তে দ্বিতীয় গোলটি হয়।
দুই দলের বল পজেশন ছিল সমান সমান।ফিলিস্তিন পোস্টে শট নিয়েছে ১৫টি এবং বাংলাদেশ নিয়েছে ১৩ টি। ম্যাচে লাল-সবুজদের পাওয়া কর্নারের সংখ্যা ৬টি। বিপরীতে ফিলিস্তিন পেয়েছে ৩টি। এ পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে ফিফা র্যাংকিংয়ে ১০০-তে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের এ দলটির বিপক্ষে কি সমান তালেই না লড়েছে ১৯৩-তে থাকা দেশটি।
কিন্তু ম্যাচ জিততে যে গোলের দরকার সেটি আর করতে পারেনি জেমি ডে বাহিনী। এ কাজে দক্ষতার পরিচয় দিয়েই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে পৌঁছে গেছে ফিলিস্তিন। অন্য দিকে ২০১৬ সালের মতো এবারো এই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হলো আসরের স্বাগতিক বাংলাদেশকে।২০১৬ সালে বাংলাদেশ সেমিতে বিদায় নিয়েছিল বাহরাইনের কাছে হেরে।
কক্সবাজার স্টেডিয়ামে বৃষ্টিভেজা কাদা মাঠে স্বাভাবিক খেলা উপহার দিতে পারেনি ফিলিস্তিনিরা। তাদের ফুটবলারদের সমস্যা হচ্ছিল। সাথে যোগ হয় লাল-সবুজদের প্রেসিং ফুটবল। এর পরও বাংলাদেশ ডিফেন্ডারদের ভুলকে পুঁজি করে ঠিকই জয় আদায় করে নেয় তারা। অন্য দিকে লাল-সবুজদের এক স্ট্রাইকার নাবিব নেওয়াজ জীবনই বঞ্চিত করেন নিজেকে, দেশকে, দেশবাসীকে। দু’টি সুবর্ণ সুযোগ তিনি নষ্ট করেন সাইডনেটে মেরে, যা বাংলাদেশকে সমতা আনতে দেয়নি।
ম্যাচের ৮ মিনিটেই লিড ফিলিস্তিনিদের। ডান দিক থেকে আসা ক্রসে ফাঁকায় দাঁড়ানো বালাহ দূরের পোস্টে হেডে দলকে গোলের আনন্দে ভাসান। তাকে মার্কিং করতে পারেননি রাইটব্যাক বিশ্বনাথ ঘোষ। এরপর গোল পরিশোধে মরিয়া চেষ্টা চালাতে থাকে বাংলাদেশ। দুই উইং এবং মাঝ মাঠ দিয়ে চলতে থাতে তাদের প্রচেষ্টা গুলো। স্ট্রাইকার মাহাবুবুর রহমান সুফিল গোলে শট নেয়ার সময় বাধাপ্রাপ্ত হন বিপক্ষ ডিফেন্ডার কর্তৃক।
জীবন তো গোলরক্ষককে কাটিয়েও ফাঁকা পোস্টে বল ঠেলতে পারেননি। তার শট চলে যায় সাইড নেটে। ৪৪ ও ৪৫ মিনিটে আবার মিসের খাতায় নাম ঢাকা আবাহনীর এই ফরোয়ার্ডের। প্রথমে ওয়ালী ফয়সালের ক্রসে মাথা লাগাতে পারেননি বল নাগালের বাইরে থাকায়। এর পরের মিনিটে তার মিস টি ক্ষমার অযোগ্য। থ্রু পাস থেকে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন জীবন। সামনে একা ফিলিস্তিনের গোলরক্ষক থাকলেও জীবনের নেয়া শট ফের আছড়ে পড়ে সাইট নেটে। ৫৮ মিনিটে জীবনের হেড লক্ষভ্রষ্ট। ৩৫ মিনিটে ফিলিস্তিনিরা ব্যবধান বৃদ্ধির সুযোগ পেলেও তা হয়নি গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানার দৃঢ়তায়। ৭১ মিনিটে খালেদ সালেহ এর শটেও বাধা বাংলাদেশ কিপার।
বাংলাদেশ তখন অলআউট অ্যাটাকে। কোচ জেমি ডে তিন ফুটবলার বদল করেন ম্যাচে সমতা আনতে। কিন্তু গোলের দেখা আর পায়নি লাল-সবুজরা। উল্টো কাউন্টার অ্যাটাকে জয় নিশ্চিত ফিলিস্তিনের। ৯১ মিনিটে দাবাগাহর শট পোস্টে বাতাস দিয়ে গেলেও ৯৫ মিনিটে তার ব্যাকহেড থেকে অরক্ষিত সামেহের ডান পায়ের তীব্র শট লাল-সবুজদেরকে আরো হতাশ করে দেন।
আসর থেকে জামাল, সুফিল, জীবনরা বিদায় নিলেও সাফ ফুটবলের চেয়ে ভালো খেলেছে এবারের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে। তাদের আক্রমণে ছিল পরিকল্পনার ছাপি। স্রেফই গোল মিস তাদের প্রথমে ফিলিপাইন ও ফিলিস্তিনের বিপক্ষে জিততে দেয়নি। ম্যাচে হারের পরও বাংলাদেশ দলকে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে দর্শকদের অভিনন্দন সেই ভালো খেলারই স্বীকৃতি। তবে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে জয়টা অধরাই থাকল লাল-সবুজদের।বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের ৪ম্যাচের মধ্যে ৩টিতে জিতেছে ফিলিস্তিন, ড্র করেছে ১টিতে।