নিজস্ব প্রতিবেদক:১২ এপ্রিল শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর সীতাকুন্ডের ভাটিয়ারীতে প্রাইভেট কার ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালককে নিখুঁতভাবে খুন করা হয়েছে। নিখুঁতভাবে খুন করলেও লাশ গুম করতে গিয়ে ধরা পড়ে খুনি চক্রের ৩ সদস্য। খুনের শিকার চালক সীতাকুন্ডের আমিরাবাদ এলাকার আবুল কালাম ওরফে আলমের পুত্র নুরুল গণি শিমুল (২২)। তিনি ওই এলাকার জনৈক উজ্জ্বল কুমার দে এর ব্যক্তিগত গাড়ি চালক।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই ৪ যুবক শুক্রবার রাতে সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ১৫শ টাকায় প্রাইভেট কারটি (চট্ট মেট্রো-গ-১২-৫০২৬) ভাড়া করে। তাদের একজন চালক শিমুলের পাশে বসে। বাকি তিনজন পেছনের সিটে বসেছিল। গাড়িটি সীতাকুন্ডের হাতিলোড়া নামক স্থানে আসার পর চালককে গাড়ি থামাতে বলা হয়। পরক্ষণে গাড়ির পেছনের সিটে বসা রবিউল হোসেন ইমন তার কাছে থাকা রশি চালকের গলায় পেঁচিয়ে টান দেয় এবং অন্যরা তাকে চেপে ধরে তিন মিনিটেই মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তাদের একজন চালকের আসনে যায় আর চালককে পেছনের সিটে ওই দুজনের মাঝখানে বসিয়ে দেয়া হয়। এ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে লাশ গুম করার চেষ্টা করে তারা। লাশটি বেড়িবাঁধ এলাকায় ফেলে দিতে যাচ্ছিল খুনীরা।
মৃত চালককে সিটে বসিয়ে ১০ কিলোমিটার গাড়ি চালায় তারা। ঈশান মহাজন রোড হয়ে ঘোষ বাড়ির কাছে পৌঁছলে প্রাইভেট কারের চাকা ড্রেনে আটকে যায়। গাড়ি পেছনের দিকে তুলতে গিয়ে সবিতা রাণী বিশ্বাস নামে এক নারীর বাড়ির সামনে গ্যাস লাইনের পাইপে ধাক্কা লাগে। এতে সবিতা রানীর সঙ্গে ৪জনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা জড়ো হলে পেছনের সিটে দুই যুবকের পাশে অপরজনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। লোকজন গাড়িতে লাশ কেন তা নিয়ে হৈ চৈ শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে গাড়ি থেকে নেমে চার যুবক পালাতে শুরু করে। এ সময় স্থানীয়রা নিশান ও ইমনকে ধরে ফেলে এবং গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয়। বাকি দুইজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পুলিশ চালক শিমুলকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শনিবার সকালে চান্দগাঁও এলাকা থেকে নেওয়াজ শরীফকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা গাড়ি ছিনতাইয়ের উদ্দেশে চালককে খুনের কথা স্বীকার করে। তারা খুনের পর লাশটি টোল রোড হয়ে কাট্টলী সৈকত এলাকায় বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়ার জন্য যাওয়ার কথাও স্বীকার করে। প্রাইভেট কার থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রশি ও একটি ছুরি পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মো. ফারুক উল হক বলেন, প্রাইভেট কারটি ছিনতাই করার উদ্দেশেই তারা চালককে খুন করে। এ চক্রটি যাত্রী বেশে পেশাদার গাড়ি ছিনতাইকারী। তাদের ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর একজনকে ধরতে অভিযান চলছে। গ্রেফতার তিনজন হলো- নোয়াখালী চাটখিলের মাহফুজুর রহমানের ছেলে মীর হোসেন নিশান (২১), সীতাকুন্ডের রহমত নগরের মো. রফিকের পুত্র রবিউল হোসেন ইমন (২০), রাউজানের উরকিরচর এলাকার আবদুল সালামের পুত্র নেওয়াজ শরীফ (২৪)। তাদের অপর সহযোগী হলো সীতাকুন্ডের গোলাবাড়ীয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের পুত্র জসিম উদ্দিন নিশান (২২)। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এদের মধ্যে মীর হোসেন নিশান বেসরকারি পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র।
পুলিশ জানায়, পালিয়ে যাওয়া খুনি চক্রের সদস্য জসিম উদ্দিন নিশান পেশাদার গাড়ি ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা। এর আগেও এ ধরনের অপরাধ করেছে সে। তার বিরুদ্ধে সীতাকুন্ড থানায় ছয়টির মতো মামলা রয়েছে। সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নিশানসহ কয়েকজনকে নিয়ে নতুন দল গঠন করে জসিম। নুরুল গণি শিমুল হত্যার ঘটনায় তার বাবা বাদি হয়ে আকবরশাহ থানায় মামলা দায়ের করেছেন।