নিজস্ব সংবাদদাতা: বর্তমানের সবচেয়ে পরিচিত এবং ভয়ংকর মাদক ইয়াবাকে ‘ক’ বা প্রথম শ্রেণির মাদক হিসেবে চিহ্নিত করে তা বিক্রয়,বিপণন এবং বহন করলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সরকার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে ২০০ গ্রামের উপরে কারো কাছে ইয়াবা পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড। এছাড়া অন্যান্য মাদকের ক্ষেত্রেও যাবজ্জীবন থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে মাদকের গডফাদারদেরকেও মৃত্যুদণ্ডের আওতায় আনা হয়েছে। ডোপ টেস্টের বিষয়টিও রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ইয়াবার বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করায় সরকার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনটি নতুন করে প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেয় বলে জানান তিনি। এরই অংশ হিসেবে গতকাল নতুন আইনটি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী ইয়াবা প্রথম শ্রেণির মাদকদ্রব্য। এর রাসায়নিক নাম অ্যামফিটামিন। এই মাদক দ্রব্য বহন, মজুদ, বিপণনের পরিমাণ ২০০ গ্রামের বেশি হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। সর্বনিন্ম শাস্তি ৫-১০ বছরের শাস্তি এবং অর্থদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।তবে এর পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম হলে এক থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি, কোনো প্রতিষ্ঠান এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটনে অর্থ বিনিয়োগ, সরবরাহ ও মদদ দিলে বা পৃষ্ঠপোষকতা করলে এর শাস্তিও মৃত্যুদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। আর কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে কাউকে প্ররোচনা দিলে, সাহায্য করলে বা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে, প্রচেষ্টা করলে অপরাধ সংঘটন হোক বা না হোক তিনিও প্রস্তাবিত আইনে অনুরূপ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, হেরোইন ও কোকেনের মতো মাদকদ্রব্যের পরিমাণ অনূর্ধ্ব ২৫ গ্রাম হলে কমপক্ষে দুই বছর এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ২৫ গ্রামের বেশি হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। প্রস্তাবিত আইনে সিসার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের ভেষজ-নির্যাস সহযোগে দশমিক ২ শতাংশের ঊর্ধ্বে নিকোটিন এবং এসএস ক্যানেল মিশ্রিত উপাদান। সিসার ক্ষেত্রেও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আইনে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে শনাক্তকরণে বিধি দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ডোপ টেস্ট করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। টেস্ট পজিটিভ হলে কমপক্ষে ছয় মাস ও সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পূর্বেরআইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল ১৯৯০ সালে। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এটিকে এখন পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। বাংলাদেশ সিঙ্গেল কনভেনশন অন নারকোটিকস ড্রাগস-১৯৬১, ইউএন কনভেনশন অন সাইকোট্রপিক সাবসটেন্স-১৯৭১ এবং ইউএন কনভেনশন অন নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবসটেন্স ১৯১৮ এ সই করেছে। এগুলোর ভিত্তিতে আইনটি হালনাগাদ করা হয়েছে। আগের আইনে অনেক বিষয় সরাসরি পরিষ্কার করা ছিল না। নতুন আইনে ইয়াবা, সিসাবার, ডোপ টেস্টের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে সব ধরনের মাদককে নতুন আইনে যুক্ত করা হয়েছে। এমন কোনো বিষয় নেই যা আইনে কাভার করবে না। কোনো না কোনোভাবে তালিকার মধ্যে চলে আসবে। ইন্টারন্যাশনাল নারকোটিকস কন্ট্রোল বোর্ডের নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রস্তাবিত আইনে ‘কন্ট্রোল-ডেলিভারি’ নামে নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এতে বিয়ারের সংজ্ঞা হালনাগাদ করা হয়েছে। বিয়ারের বিষয়ে বলা হয়েছে, বিয়ার হবে দশমিক ৫ শতাংশ অ্যালকোহল যুক্ত পানীয়। আর মাদকদ্রব্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্যের সঙ্গে অন্য যে কোনো দ্রব্য মিশ্রিত বা একীভূত দ্রব্য সমুদয় পণ্য মাদকদ্রব্য বলে গণ্য হবে। তিনি জানান, প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী কেউ যদি “মাদকের বার” চালাতে চায় তার লাইসেন্স লাগবে। লাইসেন্স ছাড়া যদি কেউ বার চালায় তার জন্য অনূর্ধ্ব এক লাখ টাকা আদায় করে শর্ত পূরণ পূর্বক লাইসেন্স দেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পুলিশ কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে ফাঁসালে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।