Search

শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার, ৩রা অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ই রবিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি

১০ বছরে ঋণ বেড়েছে তিনগুণ

বৈদেশিক ঋণে নতুন রেকর্ড: মাথাপিছু ঋণ এখন ৭৭ হাজার টাকা

ছয় মাসের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৮৪৩ কোটি ডলার

বাংলাদেশের ইতিহাসে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ আবারও নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছে। চলতি বছরের জুন শেষে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১২.১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। এই হিসাবে দেশের প্রতি নাগরিকের মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ দাঁড়ায় প্রায় ৬৩৮ ডলার বা ৭৭ হাজার ৪৩৩ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৮৪৩ কোটি ডলার। গত মার্চে ঋণের পরিমাণ ছিল ১০৪.৮ বিলিয়ন ডলার, যা জুনে দাঁড়ায় ১১২.১৬ বিলিয়নে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এই পরিমাণ ছিল ১০৩.৭৩ বিলিয়ন ডলার।

অর্থনীতিবিদদের মতে, অবকাঠামো প্রকল্পে ঋণ গ্রহণ, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ— এই তিনটি কারণেই ঋণের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। পাশাপাশি রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির তুলনায় ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধের চাপও বাড়ছে।

বর্তমান সরকারের (আওয়ামী লীগ) প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে প্রায় ৮১ বিলিয়ন ডলার। এই সময়ে সরকার আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও এআইআইবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ব্যাপক হারে ঋণ নিয়েছে। বেসরকারি খাতেও বিদেশি উৎস থেকে কম সুদের ঋণে ঝুঁকেছে অনেকে।

বর্তমানে বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সরকারি খাতের অংশ ৮২ শতাংশ, এবং বেসরকারি খাতের অংশ ১৮ শতাংশ। সরকারি খাতের ঋণ জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৩৭ কোটি ডলার (মার্চে ছিল ৮,৪৯২ কোটি ডলার)। বেসরকারি খাতের ঋণ জুন শেষে ছিল ১,০৯৭ কোটি ডলার, যা মার্চে প্রায় একই ছিল।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “দেশের বিদেশি ঋণের বড় অংশ সরকারের, যা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত হয়। তবে অতীতে কিছু প্রকল্পে অপচয় হয়েছে, যা এখন বন্ধ করা জরুরি।”

তিনি আরও বলেন, “জিডিপি অনুপাতে ঋণ এখনো সহনীয় হলেও সুদ ও কিস্তি পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ওপর চাপ বাড়ছে। তাই পরিশোধ ক্ষমতা ধরে রাখতে কাঠামোগত সংস্কার ও কার্যকর ব্যয় নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।”

১০ বছরে ঋণ বেড়েছে তিনগুণ

২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক ঋণ ছিল ৪১.১৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ১০ বছরে ঋণ বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন ডলার ঋণের মাইলফলক অতিক্রম করে।

রিজার্ভে কিছুটা স্থিতিশীলতা

বিদেশি ঋণের এই ক্রমবর্ধমান প্রবাহের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রিজার্ভ কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। প্রবাসী আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। ডলারের বিনিময় হারেও অনিশ্চয়তা কিছুটা কমেছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print