
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কাড়াকাড়ি করে প্রশাসনিক জায়গাগুলোতে তাদের লোক নিয়োগ করিয়েছে। নিয়োগের আগে তারা সংস্কারের জন্য সরকারকে যত সময় লাগে দেওয়ার পক্ষে ছিল। তবে নিয়োগ শেষ হওয়ার পরপরই ডিসেম্বর মাস থেকে তারা অসহযোগ শুরু করে দিয়েছে।
রোববার(২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমের স্বনিয়ন্ত্রণ ও অভিযোগ ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এটি সঞ্চালনা করেন সিজিএসের প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা সরকারকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিল। প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুই দলের লোকজন ভাগ করে নিল। নাম নেওয়া উচিত নয় তাও বলি, বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা তালিকা দিয়ে তাদের লোক নিয়োগ দিল। ভিসি নিয়োগ হলো ১০ জন বিএনপির, ৩জন জামায়াতের। ভিসি না পেলে প্রোভিসি দিতে হবে। এসব নিয়ে কাড়াকাড়ি। এগুলো চোখের সামনেই হয়েছে। প্রথমে রাজনৈতিক দল বলল, দুই বছর তিন বছর যা সময় লাগে সংস্কার ও বিচার করেন। চার মাসের মধ্যে তাদের সব লোক সেট করা হয়ে গেল– ডিসেম্বর থেকে শুরু হইল অসহযোগ।’
জুলাই অভ্যুত্থানের যে প্রত্যাশা ছিল, সে অনুসারে কাজ করা সম্ভব হয়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘দেশে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মধ্যে যে পারস্পরিক সহযোগিতা, তা অটুট রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার চাইলেও অনেক কিছু করা সম্ভব হয়নি।’
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এক মাস ধরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল মিডিয়াপাড়ায় ছাত্র উপদেষ্টারা নেমে যাবেন। এতে ছাত্র উপদেষ্টাদের দপ্তর কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, কাজের গতি কমে গেছে। আমলারা বসে আছেন কখন পরবর্তী সরকার আসবে। বিশেষ করে, জুনে যখন লন্ডনে ঘটনা (তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক) ঘটল, তারপর দেশের পুরা ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন হয়ে গেল।’
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ডেইলি স্টারের কনসালট্যান্ট এডিটর কামাল আহমেদ বলেন, আমলারা চান না তাদের ক্ষমতা খর্ব হোক। এ জন্য তারা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে দেন না। এটা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন বা শ্রম সংস্কার কমিশনের ক্ষেত্রে হয়েছে। স্থানীয় সরকার কমিশনসহ সব কমিশনের ক্ষেত্রেই হয়েছে।
সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার ছয় মাসের বেশি সময় পরও এর কোনো একটি বাস্তবায়ন হয়নি। গণমাধ্যমে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ছিল গত সরকারের আমলে। সেটা থেকে এই সরকার কিছুটা আমাদের মুক্তি দিতে পারত, যদি তারা চাইত।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বলেন, সাংবাদিকদের মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে আত্মজিজ্ঞাসার বিষয়টি থাকতে হবে। স্বৈরাচার দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জন্য তারা দায় অস্বীকার করতে পারবেন না।