
শীর্ষ অপরাধী ‘ছোট সাজ্জাদ’ এবার ফেসবুক লাইভে এসে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছেন বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমানকে। শিগগিরই আদালতে আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, বিচার না পেলে প্রতিশোধ নিজেই নেবেন—প্রয়োজনে নিজে মরে যাবেন। এদিকে, এ ঘটনায় ওসি বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে এমন হুমকি দেন হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১০টিরও বেশি মামলার এই আসামি।
১৯ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিও বার্তায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ছোট সাজ্জাদ বলেন, ‘ওসি যে অবস্থা করছে, যদি পুলিশ না হতো তাহলে আমি ন্যাংটা করে রাস্তায় রাস্তায় পেটাতাম। আমি এখনো চুপ আছি আদালতকে শ্রদ্ধা করে। আমার স্ত্রীকে থানায় নিয়ে নির্যাতন করেছে। আমার সন্তান মারা গেছে। আমি মামলা করেছি। মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। আমি মামলা করার পর ওসি আরিফ আমার ওপর ফেডআপ হয়ে গেছে।’
পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেটা না জেনে ওসি আরিফের কথা ধরে আমার নামে অভিযোগ আনছেন তা মিথ্যা এবং ভুল। আপনারা যাচাই-বাছাই করে অ্যাকশন নেন। আমি ধোয়া তুলসি পাতা—তা বলছি না। আপনারা তদন্ত করেন।’
পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ওসি আরিফ আমার নামে পরপর ৩টি মামলা দিয়েছে। যেকোনো সময় আমি আদালতে আত্মসমর্পণ করে ফেলবো। কারণ আমি ঘটনাগুলোতে ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে কোনো স্বাক্ষী-প্রমাণ নাই যে আমাকে জেলে ঢুকিয়ে রাখবে। আমার বউকে নির্যাতন করেছে, আমার সন্তান মারা গেছে, আমি মামলা করছি। এটা কি আমার অপরাধ হয়েছে? আমার ক্ষতি আরেকজন করলে আমি কাউকে ছেড়ে দিব না। আপনি (পুলিশ কমিশনার) ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত করান। পুরো ঘটনা কি একটা রিপোর্ট বানান। এরপর একটা ব্যবস্থা নেন। ওসি আরিফকে বদলি করান।’
নিজেই প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যদি আমি আদালতে বিচার না পাই আত্মসমর্পণের পর আমার বিচার আমি করে নেব। আমার ছেলের প্রতিশোধ আমি নিতে পারি। আমার ছেলের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে যদি মারা যেতে হয় তাও দ্বিধাবোধ নাই। আমার এক বিন্দু পরিমাণ আফসোস হবে না।’
লাইভের শেষ অংশে তিনি ওসি আরিফুর রহমানকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘একপর্যায়ে গিয়ে দেখবেন ওসি আরিফ গণপিটুনিতে মারা যাবে। ওইসময় আমার দোষ দিয়েন না যে, সাজ্জাদের ছেলেরা মেরে ফেলেছে। তোর (ওসি) যদি শাস্তি না হয়, আমি তোকে কুত্তার মতো পেটাবো। অক্সিজেন থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত কুত্তার মতো ন্যাংটা করে পেটাবো। কোর্টের রায় আসা পর্যন্ত তোরা টিকে থাকবি। যেখানেই থাকস আমি পিটাবো। প্রয়োজনে আমি মরে যাবো, তোদেরকে মেরে। তবুও আমি হার মানবো না। দেখি, তোদের জোর বেশি না আমার। আরিফ তুই প্রস্তুত থাকিস। তোর উচ্চপদস্থ যারা আছে তাদেরকে বলিস।’
এ বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, ‘সে (সাজ্জাদ) পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। ধরতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাকে যেহেতু সে হুমকি দিয়েছে, তাই আইন মোতাবেক আমি একটি জিডি করেছি থানায়। আমার থানায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। শুধু সাজ্জাদ কেন, কোনো সন্ত্রাসীকেই আমরা ছাড় দেব না।’
‘তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো খুনের মামলা আছে। আমরা পুলিশ, জনগণের সেবায় নিয়োজিত। আমাকে কেউ খুনের হুমকি দিলেও আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাব।’ বলেন তিনি।
পাঁচ মাসে ট্রিপল মার্ডারের হোতা চাঁদ
গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন–কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।
একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া জাগরনী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমেই স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে এই দুর্ধর্ষ সাজ্জাদ বাহিনী।
অভিযানে যাওয়া পুলিশকেই গুলি
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড় জালালাবাদ পেট্রোল পাম্পের পেছনে সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে অভিযানে যায় পুলিশ। তাদের উপস্থিতি টের পেয়েই গুলি চালান সাজ্জাদ। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে সাজ্জাদ পালিয়ে গেলেও তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আটক করা হয় তখন।
পুলিশ তখন জানিয়েছিল, সাজ্জাদের অবস্থান শনাক্ত করে গভীর রাত সাড়ে ৩টা থেকে ভোর ৪টার দিকে অভিযানে যায় পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই সাজ্জাদ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পাশের একটি ভবনের ছাদে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন ওই দু’জন।
ধরিয়ে দিতে পুরষ্কার ঘোষণা
ফেইসবুক লাইভে এসে প্রকাশ্যে থানার ওসিকে পেটানোর হুমকি দেওয়ার দুই দিনের মাথায় সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে এ পুরস্কার ঘোষণা করা হল। বৃহস্পতিবার(৩০ জানুয়ারি) বিকালে নগর পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ এ পুরস্কারের ঘোষণা দেন।