Search

বৃহস্পতিবার, ১১ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বৃহস্পতিবার, ১১ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার, ১১ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি

ইফা চট্টগ্রাম বিভাগের বিতর্কিত পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার বদলীর আদেশকে দেখালেন বৃদ্ধাঙ্গুলি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামিক ফাউণ্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের বিতর্কিত পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার বদলীর আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করায় প্রতিষ্ঠানের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকার উপরি আয় ছেড়ে চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে না যেতে নিজের বদলীর আদেশ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে এর আগে তাঁকে বেশ কয়েকবার বহিষ্কার করলেও এবার শুধুমাত্র বদলী করায় অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জানা যায়, গত ২৭ ডিসেম্বর ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ৩ বিভাগীয় পরিচালককে বদলির আদেশ জারি করা হয়।ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের সচিব মোহাম্মদ আব্দুল কাদের শেখ স্বাক্ষরিত এই আদেশে ঢাকা বিভাগের পরিচালক বোরহান উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আহসানকে চট্টগ্রাম বিভাগে, চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক জনাব তৌহিদুল আনোয়ারকে ময়মনসিংহ বিভাগে এবং ময়মনসিংহ বিভাগের পরিচালক জনাব এ,কে,এম ফজলুর রহমানকে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে বদলী করা হয়। বদলীকৃত এই ৩ কর্মকর্তাকে ২রা জানুয়ারি নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করলে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত করার কথাও বলা হয় আদেশে।

অন্য ২ জন কর্মকর্তা যথাসময়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করলেও চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার গায়ের জোরে বদলির আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। যদিও ইতোমধ্যে পরিচালক বোরহান উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আহসান ঢাকা বিভাগীয় অফিস থেকে চট্টগ্রাম অফিসে যোগদান করলেও তৌহিদুল আনোয়ার উনাকে অফিস করতে দিচ্ছেন না। এমনকি কোন ধরনের হিসাব-নিকাশও বুঝিয়ে না দিয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে রেখেছেন।

তৌহিদুল আনোয়ারের বদলীর সংবাদে ইসলামিক ফাউণ্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন আলেম উলামাদের মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে যায়, তারা একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান। কিন্তু হঠাৎ তাঁর বদলী নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হওয়ায় সবার মাঝে নেমে আসে হতাশা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামিক ফাউণ্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান , তৌহিদুল আনোয়ার নাকি অফিসে বলে বেড়াচ্ছেন ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের ডিজি/সচিবের আদেশ মেনে চলার সেই সময় তার নেই। সরাসরি ধর্ম সচিবের সাথে তাঁর যোগাযোগ। বিশেষ প্রয়োজনে কক্সবাজার যাওয়ার সময় সচিব মহোদয় তাঁর সাথে দেখা করেছেন এবং বদলি আদেশ সংশোধন করে তাঁকে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে পুনর্বহালের সুযোগ করে দিবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, বদলীর আদেশের কিছুদিন পূর্বে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগের জামায়াতপন্থী এই বিতর্কিত পরিচালকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মস্থলে ভুয়া ভাউচার দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, অধীনস্থ কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সাথে স্বেচ্ছাচারিতা, আলেম-ওলামা পীর মশায়েখ ও সরকার দলীয় নেতাদের সাথে দ্বন্দ্ব, জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদ কেন্দ্রীক দূর্নীতি, ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করা, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে পতাকা উত্তোলন না করা, জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদ এবং আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ কেন্দ্রীক ভাসমান দোকান ও মার্কেট থেকে মাসোহারা আদায় এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার হলে তার বিরুদ্ধে একজন যুগ্ম-সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হয়। যদিও তিনি তদন্ত কমিটিকে প্রভাবিত করেন বলেও জানায় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।

সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করার সময় তৌহিদুল আনোয়ার বিধিবহির্ভূতভাবে ট্রাভেল এজেন্সি ও বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা এবং ইসলামিক ফাউণ্ডেশন পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দূর্নীতির জাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করতেছেন বিধায় তিনি অন্যত্র বদলী হতে নারাজ।

এখানে খুবই মজার একটি ব্যাপার হলো পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ও কমপ্লেক্সের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের গাড়ীর শো-রুম, মসজিদের সিঁড়ির নীচের একটি গুদাম, মসজিদ ও কমপ্লেক্সের উত্তর-পশ্চিম পাশে অবস্থিত নার্সারী এবং প্রশাসনিক ভবনের একটি কক্ষে অবস্থানকারীদেরকে অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করে তাদেরকে উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর চিঠি প্রেরণ করেছেন। যদিও এসব পয়েন্ট থেকে তৌহিদুল আনোয়ার এতদিন প্রতিমাসে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা করে আদায় করেন মর্মে নিশ্চিত করেন একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। এসব বিষয়ে গুরুত্বের সাথে সংবাদও প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। দূর্নীতির জালে না ফাঁসতে এতদিন যাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে ভাড়া নিয়েছেন তাদেরকে অবৈধ দখলদার সাজিয়ে তড়িঘড়ি করে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও অনেকের ধারণা।

ধর্ম সচিবের বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে উনার ব্যক্তিগত সহকারী সচিব মহোদয় অফিসের বাইরে রয়েছেন মর্মে জানান । সদ্য বদলী আদেশপ্রাপ্ত ইসলামিক ফাউণ্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি সেই বিষয়ে তিনি অবগত আছেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উনার বদলী স্থগিত বা অন্য কোন বিষয়ে নতুন কোন আদেশ জারি হয়নি। এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের ডিজি সাহেবের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের ডিজি মুনিম হাসান বলেন, অফিসের সব হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন না হওয়ার কারণে তৌহিদুল আনোয়ার এখনো তাঁর নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে পারেন নি। তাঁর বদলীর আদেশ স্থগিত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন কোন আদেশ জারি হয়নি এবং সুযোগও নেই।

জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের সচিব মোহাম্মদ আব্দুল কাদের শেখ জানান, এই ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। কিছু জানার থাকলে ধর্ম সচিবের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

এই ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে যোগদান করতে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় থেকে আগত বোরহান উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আহসান এবং তৌহিদুল আনোয়ারের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা কেউ ফোন রিসিভ করেন নি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print