
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দাদের নিরবচ্ছিন্ন পানি-বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে সড়ক অবরোধের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নারী-পুরুষসহ প্রায় ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ আগষ্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেন সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ। এর আগে মঙ্গলবার রাতে সীতাকুণ্ড থানায় এসব মামলা করা হয়।
পুলিশ জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও বায়েজিদ সংযোগ সড়কে ৬ ঘণ্টা অবরোধ করে দুর্ভোগ সৃষ্টি, গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ায় ৬টি মামলা হয়েছে। এতে ৪৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়।
এ ঘটনায় উপজেলার আলীনগরের শামছুল হকের ছেলে মো. ফারুকের নেতৃত্বে আনোয়ার, কাউছার, নুর ইসলাম, মোখলেস, আবুল হোসেনসহ আরো ১৪০-১৫০ জন ব্যক্তি ইন্ধন দেন এবং তারা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে আন্দোলনকে সহিংসতার রূপ দেয়ার চেষ্টা করে বলে পুলিশের দাবি।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের শুরু থেকেই ইয়াছিন বাহিনী অধিকার আদায়ের নামে সন্ত্রাসীদের নামিয়ে দেয়। আমরা আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করলে তারা উল্টো আমাদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারগ্যাস, ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত নগরের ফৌজদারহাট-বায়েজিদ সংযোগ অবরোধ করে রাখে সলিমপুরের বাসিন্দারা। এ সময় ওই সড়ক দিয়েও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। তাদের দাবি— পানি-বিদ্যুতের সংযোগ দিতে হবে এবং উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসন করতে হবে। এরপর ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড ও ফৌজদারহাট-বন্দর সড়কের সামনে অবস্থান নেয়।
সেখানে তারা বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বারবার তাদের সঙ্গে কথা বলে শান্ত করার চেষ্টা করেন। পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে তাদের ফিরে যেতে বারবার অনুরোধ করলেও তাতে কর্ণপাত করছিলেন না অবরোধকারীরা।
কারাগার স্থানান্তরসহ সরকারি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে সরকারি পাহাড় দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বসতি ও স্থাপনা থেকে উচ্ছেদ শুরু করে জেলা প্রশাসন। অভিযানে পানির লাইন ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। তবে প্রথমদিনেই উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসন যাদের অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করেছে তারা উচ্ছেদে বাধা দেয়ার পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের চেষ্টা করেন।
প্রসঙ্গত, বিগত দুই দশক আগে নোয়াখালী থেকে এসে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে আস্তানা গাড়েন ইয়াসিন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দাগি আসামি ও সন্ত্রাসীদের এনে গহীন পাহাড়ে গড়ে তোলে তার নিজস্ব বাহিনী। একের পর এক পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায় দুই ভাই ইয়াসিন ও ফারুক।
সম্প্রতি সরকার জঙ্গল সলিমপুরের খাস জমিতে কয়েকটা বৃহৎ কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। সরকারি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে সরকারি পাহাড় দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বসতি ও স্থাপনা মঙ্গলবার থেকে উচ্ছেদ শুরু করে জেলা প্রশাসন। অভিযানে পানির লাইন ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। তবে প্রথম দিনেই উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।