
বিশেষ প্রতিনিধি : কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় ৩ বছর মেয়াদি জলমহাল ইজারা প্রদানে ব্যাপক অনিয়ম তথা সরকারি নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। এই কারণে বিষয়টি নিয়ে জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট আপীল করেছেন সংক্ষুব্ধ পক্ষ। উক্ত পক্ষের দাবী উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি সম্পূর্ণ নীতিবহির্ভূতভাবে তীরবর্তী-নিকটবর্তী ও প্রকৃত মৎস্যজীবীদের সংগঠনকে বাদ দিয়ে একটি দূরবর্তী তথাকথিত মৎস্যজীবীদের সংগঠনকে ইজারা পাইয়ে দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ইজারাযোগ্য জলমহাল রয়েছে ৪৯ টি। সেগুলোর মধ্যে চলতি বছরের ১৭ই ফেব্রুয়ারী ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় ৯টির। সেখানে ১৯.৬৮ একরের কেরুংখালী -ডুলখালী জলমহালসহ আরো কয়েকটি জলমহাল ইজারায় অনিয়ম করা হয়েছে মর্মে জানা যায়। দরপত্রে ১৯.৬৮ একরের এই জলমহাল টির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৭,৫০,০০০/-(সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা)। এই জলমহালের তীরবর্তী -নিকটবর্তী সংগঠন চরনদ্বীপ কেরুংখালী ও ডুলখালী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ ৭,৯৫,০০০/- টাকা ডাক দিয়ে আবেদন করেন। এই সংগঠনের সকল সদস্য সরকারি তালিকাভুক্ত (এফআইডি) মৎস্যজীবী। বিপরীতে ২৫,২২, ০০০ টাকা ডাক দিয়ে আবেদন করেন পশ্চিম চরনদ্বীপ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি:। যদিও এই সমিতির কেউ সরকারি তালিকাভুক্ত (এফআইডি) মৎস্যজীবী নয়। এই সমিতির সভাপতি জয়নাল উদ্দিন এবং সম্পাদক আহমদ হোছন বিভিন্ন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। উক্ত সমিতির কোন সদস্য জলমহাল এলাকার অর্থাৎ ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাও নয়।
এছাড়া আরো ২টি দূরবর্তী সমিতি যথাক্রমে প্রায় ২০ এবং ২২ লক্ষ টাকা ডাক দিয়ে আবেদন করেন। যদিও নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কোন জলমহাল যদি ২০ একর এবং ১০ লক্ষ টাকার কম মূল্যের কম হয় তাহলে সেটার ইজারা প্রদানে ক্ষমতা রয়েছে উপজেলা জলমহাল কমিটির। তার চেয়ে বেশী হলে সেটা বিভাগীয় কমিশনারের সুপারিশে বাস্তবায়ন করবেন জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক। তাই উপজেলা কমিটির বেলায় ইজারার ক্ষেত্রে ২৫, ২২ ও ২০ লক্ষ টাকার ৩টি ডাকই অবৈধ। কারণ নীতিমালা অনুযায়ী ডাকের পরিমাণ অবশ্যই ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে হতে হবে। কিন্তু উপজেলা জলমহাল কমিটি সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে দূরবর্তী, কথিত, অপেশাদার মৎস্যজীবী সর্বোচ্চ ডাককারী চরনদ্বীপ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে জলমহালটি ইজারা দেন।
চরনদ্বীপ কেরুংখালী ও ডুলখালী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূরুল আমিন বলেন, উপজেলা জলমহাল কমিটির অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত ছিলো যে, নীতিমালা অনুযায়ী নিকটবর্তী-তীরবর্তী হিসাবে উক্ত জলমহালের দাবীদার একমাত্র আমাদের সংগঠন। এছাড়া আমাদের সমিতির ৬৪ জন সদস্যই সরকারি তালিকাভুক্ত ও প্রকৃত মৎস্যজীবী, মৎস্য চাষ করেই সবাই জীবীকা নির্বাহ করে। ২০১০ সালেও এই জলমহালের জন্য একটি সমিতি ১৬ লক্ষ টাকার ডাক দিয়ে আবেদন করেছিল। কিন্তু তৎকালীন উপজেলা জলমহাল কমিটি নীতিমালা অনুযায়ী আমাদের সমিতিকে মাত্র ৩,৫০,০০০/- টাকায় বরাদ্দ দিয়েছিলেন। উপজেলা জলমহাল কমিটি কিভাবে সর্বোচ্চ ডাককারীকে বরাদ্দ দিলেন সেটাই দেখার বিষয়, নিশ্চয়ই কোন অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। সেটা না হলে একটি সমিতি নিয়ম বহির্ভূতভাবে এত বেশী টাকার ডাক দিয়ে তারা বরাদ্দও পেল যা সত্যিই রহস্যজনক। আমরা গরীব -অসহায় মৎস্যজীবী, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সরকারি নীতিমালা ভঙ্গ করে আমাদের সাথে অবিচার করেন তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই। এই বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট আপীল করবো। আশা করি আমরা উনার কাছে অবশ্যই ন্যায় বিচার পাবো। তবে এমন অনিয়ম তদন্তের জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং ভূমিমন্ত্রী মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত-উজ-জামান বলেন, নীতিমালায় না থাকলেও সর্বোচ্চ ডাকের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। অন্যথায় আমাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। নিকটবর্তী সমিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নীতিমালায় থাকলেও সবসময় নিকটবর্তী সমিতি বরাদ্দ পাবেন এমন কোন কথা নেই। নীতিমালায় থাকলেও সেটা বিবেচনাযোগ্য। সরকার এমনিতে নীতিমালা থেকে এই শর্তটি বাদ দেওয়ার চিন্তা করছেন। নিকটবর্তী হিসেব করলে তো সবসময় এই সমিতিই পাবে, তাহলে ৩ বছর পর পর আর দরপত্র আহ্বানের কি দরকার? ২০-২৫ বছরের জন্য জলমহালটি একেবারে তাদেরকে বরাদ্দ দিয়ে দিলেই তো হয়। ২০১০ সালেও সর্বোচ্চ ডাককারীকে না কমমূল্যে এই সমিতিকে দেওয়া হয়েছিল কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এই ধরনের কোন ডকুমেন্টস পাইনি। যেই সমিতিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেই সমিতির সদস্যরা প্রকৃত মৎস্যজীবী কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা মৎস্যজীবী না হলে তাদের আসল পেশার তথ্য সংক্ষুব্ধ পক্ষ উপস্থাপন করুক।
অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জলমহাল বরাদ্দে কোন প্রকার অনিয়মের সুযোগ নেই। নীতিমালার সকল শর্ত বিবেচনা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোন পক্ষ অসন্তুষ্ট হলে কিংবা নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে মনে করলে জেলা কমিটির কাছে আপীল করতে পারেন। এই ব্যাপারে আমাদের পুনঃ বিবেচনার কোন সুযোগ নেই।