প্রভাতী ডেস্ক: বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তিনি দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শায়রুল কবির খান জানান, বিকেল ৫টা ৫মিনিটে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তরিকুল ইসলাম। টানা ১১ দিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত ১০ অক্টোবর তরিকুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে ১২ অক্টোবর অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তাকে নীবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) রাখা হয়েছিল।
সংক্ষেপে তরিকুলের জীবনী: তরিকুল ইসলাম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় তরিকুল ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের শুরু হয়। ১৯৫৩ সালে তিনি যশোর জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। একটানা আট বছর শিক্ষা গ্রহণের পর ১৯৬১ সালে তিনি এই স্কুল থেকে প্রবেশিকা (বর্তমান এস.এস.সি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
১৯৬৩ সালে তিনি যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে আইএ এবং ১৯৬৮ সালে একই কলেজ থেকে তিনি অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
কলেজের শহীদ মিনার জরাজীর্ণ হওয়ায় ১৯৬২ সালে সহপাঠীদের শহীদ মিনার তৈরি করে পাকিস্তান সামরিক সরকারের রোষানলে পড়ে গ্রেফতারও হন। কারাগারে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে পরিচয়। সেই সূত্রে দীক্ষা বাম রাজনীতিতে। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৮ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের জন্য রাজবন্দি হিসেবে যশোর ও রাজশাহীতে কারাভোগ করেন দীর্ঘ ৯ মাস। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় গ্রেফতার হন।
১৯৭০ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন তরিকুল। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ন্যাপ থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) হয়ে পরে বিএনপিতে যোগ দেন বরেণ্য এ রাজনীতিক।
জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ৭৬ সদস্যের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য তরিকুল ইসলাম। সেই সঙ্গে বিএনপির যশোর জেলা আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। ১৯৮০ সালে জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে পর্যায়ক্রমে তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ পান।
তরিকুল ইসলাম বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছেন তিনি। চারদলীয় জোট সরকারের সময় তিনি তথ্য এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক। স্ত্রী নার্গিস ইসলাম তার অন্যতম রাজনৈতিক সহযোদ্ধা।