শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

যার হয়ে সাজা খেটেছিলেন মিনু, সেই কুলসুমী গ্রেফতার

বামে সবুজ ওড়না পরিহিত কুলসুমী এবং বামে হলুদ ওড়না পরিহিত মর্জিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে একটি হত্যা মামলায় যার হয়ে মিনু জেল খেটেছিলেন অবশেষে সেই মামলার মূল আসামি কুলসুমী আক্তার কুলসুমীকে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানা পুলিশ।কুলসুমীকে সহযোগিতা করার অপরাধে মর্জিনা আক্তার নামে আরো এক নারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) ভোরে নগরের পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন।

তিনি বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে পতেঙ্গা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে কোহিনুর আক্তার নামে এক গৃহকর্মী হত্যা মামলার আসামি কুলসুমী আক্তার কুলসুমীকে গ্রেফতার করা হয়। গত তিন বছর ধরে তার হয়ে জেল খেটেছিলেন মিনু নামে আরেক নারী। সেই মিনু আইনী প্রক্রিয়ায় বের হয় জেল থেকে। ক’দিন পর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় মিনু। হারিয়ে যায় মিনুর ছেলেও। একের পর এক রহস্যজালে আবৃত হতে থাকে পুরো ঘটনা। অন্যদিকে সাজাপ্রাপ্ত ঘাতক কুলসুমী গ্রেফতার না হওয়ায় এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে পারছিল না পুলিশ।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জে একটি বাসায় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে মোবাইলে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টসকর্মী কোহিনুর আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কোহিনুর আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন গার্মেন্টসকর্মী কুলসুম আক্তার কুলসুমী। এর পর থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়।

মামলায় পুলিশ দুই বছর তদন্ত শেষে কোহিনুরকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দিলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়। এর মধ্যে ১ বছর ৩ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান কুলসুম।

মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের নভেম্বরে তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ওই হত্যা মামলায় আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। ওই সাজার পরোয়ানামূলে ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলি হয়ে মিনু কারাগারে যান।

চট্টগ্রামের আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদ সর্বপ্রথম বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করে।

এরপর গত ২২ মার্চ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁইয়ার আদালতে মিনুকে হাজির করা হলে আদালত তাকে জামিন দিয়ে মুল আসামী কুলসুমীকে আটকের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়।

এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামী কুলসুমী ও তার সহযোগী মর্জিনাকে বুধবার মধ্যরাত ৩টায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতে হাজির করা হবে।’

এদিকে জেল থেকে বের হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় রহস্যজনকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় মিনুর। এরপর গায়েব হয়ে যায় মিনুর ছোট ছেলেও।

এসব ঘটনার পিছনে কুলসুমি ও মর্জিনার হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ জানিয়ে আইনজীবী গোলাম মোওলা মুরাদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কুলসুমী ও মর্জিনা একটি অপরাধ ঢাকতে একাধিক অপরাধ করে বসেছেন। এই ঘটনার পিছনে কারা জড়িত ও এমন ঘটনার উদ্দেশ্য কী- তা বের করতে আদালতের নির্দেশনা পেলে ভাল হয়। এই দুইজনকে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print