শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

করোনার ভয়াবহতা: চট্টগ্রামে ছেলের জন্য আইসিইউ বেড ছেড়ে দিয়ে এক ঘণ্টা পর মারা গেলেন মা !

নিজস্ব প্রতিবেদক: মা ও ছেলে দু’জনেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। মায়ের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে নেয়া হয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)।

আইসিইউ বেডে মৃত্যুশয্যায় থাকা মা শোনেন ছেলের অবস্থাও খুব খারাপ। তারও আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন। ছেলের প্রয়োজনে মা ইশারা দিয়ে চিকিৎসককে বলেন, তাকে বাদ দিয়ে ছেলেকে যেন আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া হয়।

এরপর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতামত নিয়ে মাকে আইসোলেশন সেন্টারে রাখেন চিকিৎসকরা। সেখানে ঘণ্টাখানেক পরই তার মৃত্যু হয়। বর্তমানে ছেলেটি আইসিইউ বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) বিকেলের দিকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। বুধবার (২৮ জুলাই) রাতে হাসপাতালের আইসিইউ বেডের ইনচার্জ ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস সংবাদ মাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, সপ্তাহখানেক আগে নগরের দিদার মার্কেট সিঅ্যান্ডবি কলোনী এলাকার বাসিন্দা কানন প্রভা পাল নামে ৬৭ বছর বয়সী এক নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। কয়েকদিন পর তার ছেলে শিমুল পালও (৪২) করোনায় আক্রান্ত হয়ে একই হাসপাতালে ভর্তি হন।

এরইমধ্যে মা কানন প্রভাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছিল। গতকাল (মঙ্গলবার) শিমুলের শারীরিক অবস্থারও অবনতি হয়। তারও আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোথাও আইসিইউ বেড পাওয়া যাচ্ছিল না।

ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতালের বেডে এমন খবর শুনে তার মা ইশারা করেন, তাকে বাদ দিয়ে যেন ছেলে শিমুলকে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া হয়। শেষে পরিবারের সবার সম্মতিতে চিকিৎসকরা মাকে বাদ দিয়ে ছেলে শিমুল পালকে আইসিইউ বেডে শিফট করান এবং মাকে আইসোলেশন বেডে নিয়ে যান। এ ঘটনার ঘণ্টাখানেক পরই বৃদ্ধা মা কানন প্রভার মৃত্যু হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘সবকিছু জেনে যেন কিছুই করার নেই। মায়ের অবস্থাও খারাপ ছিল। তারপরও ছেলেকে যদি অন্য কোথাও আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া যেত, তাহলে মাকে আইসোলেশন বেডে নেয়া লাগত না। বর্তমানে ছেলের অবস্থাও বেশি ভালো না।’

এসময় সবাইকে স্বাস্থবিধি মেনে চলার অনুরোধও জানান তিনি।

এদিকে, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে গতকাল (মঙ্গলবার) একদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১৭ জন। একই সময়ে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন ৯১৫ জন। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩২ জনে এবং শনাক্তের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৪৩৬ জনে।

উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ২২ মে  একইভাবে মুমূর্ষু অবস্থায় এস আলম ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালক মোরশেদুল আলমের গুরুতর অবস্থার কথা জেনে ছোট ভাই রাশেদুল আলম বড় ভাইকে নিজের আইসিইউ সিটে দিতে চিকিৎসকদের কাছে অনুরোধ জানান। জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা এ সময় রাশেদুলের শারীরিক অবস্থা একটু উন্নতির দিকে হওয়ায় তার আইসিইউ বেডে মোরশেদকে ভর্তি করান। কিন্তু সেদিন রাতে ওই শয্যাতেই মোরশেদুল আলম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print