রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

মায়ের কাছে রান্না শিখে সেরা রাঁধুনী চট্টগ্রামের সাদিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: মায়ের কাছেই তার রান্নার হাতেখড়ি শুরু হয় ছোটবেলায়। মা-বাবা, ভাই-বোনকে রান্না করে খাওয়াতে খুব পছন্দ করেন সাদিয়া। পরিবারের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় আজ দেশ সেরা রাঁধুনীর খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি।

‘রান্নার কোনো কোর্স করিনি। মায়ের কাছে প্রথম শেখা। এরপর ইউটিউব দেখে বা বিভিন্ন রান্নাবিষয়ক খবরাখবর জেনে নিজ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেরা রাঁধুনী হয়েছেন তিনি। নিজ আগ্রহেই ঘরের সবাইকে রান্না করে খাওয়াতে পছন্দ করতেন তিনি।’- সংবাদ মাধ্যমকে এমনটিই জানাচ্ছিলেন ‘সেরা রাধুনী ১৪২৭’ এর বিজয়ী সাদিয়া তাহের।

চট্টগ্রামের মেয়ে সাদিয়া তাহের। বাংলাদেশের কুকিং রিয়েলিটি শো ‘সেরা রাঁধুনী ১৪২৭’ এর ৬ষ্ঠ আসরে অংশগ্রহণ করে ২৮ প্রতিযোগীর মধ্যে জয়ী হয়েছেন। দীর্ঘ প্রতিযোগিতার পর জাঁকজমক চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই)।

উক্ত অনুষ্ঠানেই এ বছরের সেরা রাঁধুনী হিসেবে ঘোষণা করা হয় সাদিয়ার নাম। পুরস্কার হিসেবে তিনি পেয়েছেন স্মারক ও ১৫ লাখ টাকা। সেরা রাঁধুনী হওয়ার জন্য দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে।

সাদিয়া জানান, ‘অডিশনের দিন আমি একটি ডেজর্ট আইটেম তৈরি করেছিলাম। খুবই নার্ভাস ছিলাম। কখনও ভাবিনি, এতো ভালো ভালো রাঁধুনীর মধ্যে টিকতে পারবো। তবে অডিশনে টিকে যাওয়া পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।’

সারাদেশ থেকে ২৮ জন প্রতিযোগী নিয়ে শুরু হয় কুকিং রিয়েলিটি শো ‘সেরা রাঁধুনী ১৪২৭’। এরপর গ্র্যান্ড সিলেকশনের পর মোট ১৫ জন সেরা রাঁধুনীদের নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হয়।

এ বিষয়ে সাদিয়া জানান, ‘আমাদের ১৫ জনকে নিয়ে শুরু হয় সেরা রাধুনী ১৪২৭ এর যাত্রা। টানা ৪-৫ দিন রান্নার বিষয় নিয়ে আমাদেরকে গ্রুমিং করানো হয়। অনেক কিছু শিখেছি গ্রুমিংয়ের মাধ্যমে।’ ‘এরপর প্রতি পর্বে একেক করে প্রতিযোগীরা বাদ পড়তে থাকেন। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে হয়েছে আমাদেরকে। যেমন-চোখ বেঁধে খাবারের স্বাদ গ্রহণ করে সঠিক উত্তর দেওয়া, তেল না দিয়ে রান্না করা, বা বাক্স রহস্য ইত্যাদি।’

সব বাঁধা অতিক্রম করে এরপর টিকে যান সেরা তিন জন। সাদিয়ার মতে, ‘সবাই ভালো রাঁধুনী। ছোট ছোট কিছু ভুলের জন্য হয়তো তারা সেরা রাঁধুনীর তকমা পাননি।’

প্রতি পর্বেই বিভিন্ন রান্না আর চ্যালেঞ্জ উতরে বিচারকদের মন ভরিয়ে দিয়েছেন সাদিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি কখনও ভাবিনি যে সেরা রাঁধুনী হতে পারবো। দেশবরেণ্য সব রন্ধশিল্পীরা এ অনুষ্ঠানের বিচারক ছিলেন। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু জেনেছি ও শিখেছি।’

সাদিয়া বলেন, ‘রান্নার বিষয়ে ছোট থেকে তীব্র আকর্ষণ ছিলো। পরিবারের সবাইকে রান্না করে খাওয়াতাম। সবাই প্রশংসা করতেন। এরপর হঠাৎই একদিন সেরা রাঁধুনী ১৪২৭ এ রেজিষ্ট্রেশন করলাম। এরপরই ভাগ্য যেন মোড় নিলো।’

এ বিষয়ে সাদিয়া বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতায় সবাই ঘর থেকেই উঠে আসা। কেউ সেভাবে প্রফেশনাল শেফ নন। তবে আমাদের সবারই রান্নাবিষয়ক জ্ঞান ভালো ছিলো।’

‘আমিও ঘরোয়াভাবেই রান্নাবিষয়ক খুঁটিনাটি জেনেছি। আপনার যখন কোনো বিষয়ে আগ্রহ জন্মাবে; তখন দেখবেন সে বিষয়ে জানতে ও শিখেতে ইচ্ছে করবে। আমার ক্ষেত্রে তেমনটিই হয়েছে। আমি রান্নার বিভিন্ন ভিডিও দেখতাম আর সেগুলো নিজের মতো করে করার চেষ্টা করতাম।’

বর্তমানে সাদিয়া চট্টগ্রামের একটি বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ভবিষ্যত নিয়ে সাদিয়া জানান, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি রান্নাবিষয়ক আরো জ্ঞানার্জন করবো। কারণ শেখার কোনো শেষ নেই। রান্নায় আরো অভিজ্ঞ হতে অনুশীলনেরও প্রয়োজন আছে।’

২০০৬ সালে প্রথম ‘সেরা রাঁধুনী’ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এবার ছিলো প্রতিযোগিতার ৬ষ্ঠ মৌসুম। এবারের আসরের বিভিন্ন পর্বে দর্শকেরা উপভোগ করেছেন দেশি পার্বণ, রামাদান নাইটস, স্বাদের বিশ্বভ্রমণ, মোগলাই মহোৎসব, তেল দেওয়া বন্ধ, বাক্স রহস্য, চোখ বুজে স্বাদের খোঁজেসহ বেশ কিছু অভিনব পর্ব। প্রতিটি পর্বই ছিল চমক ও নাটকীয়তায় ভরা।

অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত পর্বে নির্বাচিত ১৫ প্রতিযোগীসহ বিগত আসরগুলোর শীর্ষ প্রতিযোগী, দেশবরেণ্য রন্ধন বিশেষজ্ঞ ও স্কয়ারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার উপস্থিত ছিলেন।

‘সেরা রাঁধুনী ১৪২৭’ এ দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন যথাক্রমে খুলনার নাদিয়া নাতাশা ও ঢাকার মরিয়ম হোসেন নূপুর। অন্য দুই বিজয়ী পেয়েছেন যথাক্রমে ১০ ও ৫ লাখ টাকা ও স্মারক।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print