প্রভাতী ডেস্ক: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির রায়ের প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের আদালত বর্জন কর্মসূচির মধ্যে আওয়ামী সমর্থকদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সকাল ৯টা থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের এই কর্মবিরতি আর বিক্ষোভের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভগের কার্যক্রম চলে।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বেঞ্চ সকাল ৯টায় আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করেন। অ্যাটর্নি জেনারেলসহ মামলা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা সে সময় উপস্থিত ছিলেন।
আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর দোতলায় আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে গেটে (সুপ্রিমকোর্টের মূল ভবনে যাওয়ার সংযোগ পথ) তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। ফলে অন্য আইনজীবীদের নিচতলার সিঁড়ি দিয়ে আপিল বিভাগে যাতায়াত করতে হয়।
বিক্ষোভ চলাকালে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদীন দাবি করেন, সাধারণ আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আদালত বর্জন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে গেটে তালা দিয়েছেন।
তাদের এ বিক্ষোভ চলাকালে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের নেতৃত্বে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বারের সভাপতির কক্ষের সামনে যান গেটের তালা ভাঙতে। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়, যা এক পর্যায়ে হাতাহাতির রূপ নেয়।
পরে আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিকে রাজনৈতিক মঞ্চ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আইনিভাবেই করতে হবে। আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত আইনজীবী সমিতি নেয়নি।
তিনি বলেন, আদালত বর্জন করলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা করতে পারেন। গেটে তালা দিয়ে সাধারণ আইনজীবীদের তারা বাধ্য করতে পারেন না। এ তালা ভাঙতে হবে।
অন্যদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, বন্দুকের মুখে রেখে তাকে রায় দেয়ানো হয়েছে। সরকারের চাপে মাথা নত করে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর রায় দেয়া হয়েছে। সরকার বিচারিক আদালতকে করায়ত্ত করেছে, উচ্চ আদালতকেও করায়ত্ত করার চেষ্টা করছে। বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধ না হলে সারা দেশেই আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, কাল রায় ঘোষণা করার সময় ওই আদালতের ডিএজি, এএজি ও সরকার সমর্থক আইনজীবী ছাড়া কোনো সাধারণ আইনজীবীকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আদালতটি ঘিরে রেখেছিল। এটিই প্রমাণ করে চাপে মাথা নত করে এ রায় দেয়া হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল খারিজ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ের পর সংবাদ সম্মেলন করে বুধবার সর্বোচ্চ আদালতের দুই বিভাগে (হাইকোর্ট ও আপিল) কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন বিএনপিসমর্থক আইনজীবীরা। তাদের আদালত বর্জনের এ কর্মসূচিতে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টও সমর্থন জানায়