শুক্রবার, ১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শুক্রবার, ১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার, ১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করোনা বিধি লঙ্ঘন এবং সাংবাদিক হেনস্তার মাধ্যমে বালি আর্কেডের যাত্রা !

বিশেষ প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যাপক লোক সমাগমের মাধ্যমে ২রা এপ্রিল (শুক্রবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর উদ্বোধন করা হলো শেঠ প্রপার্টিজ এর মালিকানাধীন চকবাজারস্থ বহুল আলোচিত সুপার মল বালি আর্কেডের। এই সুপার মল উদ্বোধনের সময় বিভিন্ন অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। এমনকি বর্তমানের ভয়ংকর মহামারী করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধিও মানা হয়নি। উদ্বোধন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের হেনস্তা করা হয়। সুপার মলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং জাতীয় পার্টি নেতা সোলায়মান আলম শেঠের নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে সাংবাদিকদের বাকবিতণ্ডা এবং ধাক্কাধাক্কি হয়।

প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে এই সুপার মলের উদ্বোধন নিয়ে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি মাইকিং এবং তরুণ -তরুণীদের শো ডাউনও করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান আমন্ত্রিত হওয়ায় ব্যাপক লোকসমাগমের ধারণা সহজেই অনুমেয় ছিল। সর্বশেষ সুপার মলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোলায়মান আলম শেঠ আগের দিন অর্থাৎ ১লা এপ্রিল সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়ে দেন ২রা এপ্রিল সন্ধ্যায় নগরবাসীর জন্য উপহারসরূপ বহুল আলোচিত সুপার মলের যাত্রা হবে তাই সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। এসময় সবার আন্তরিক সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

উদ্বোধনের সময় সন্ধ্যায় বলা হলেও বিকেল ৪টা থেকে মার্কেটের দুই পাশে হাজারো লোক জমায়েত হয়। এসব লোকজনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ প্রশাসনকেও। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সংবাদকর্মীরা উপস্থিত হন। ৬টার দিকে মঞ্চে আসেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোলায়মান আলম শেঠসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। মাগরিবের আজানের ঠিক ৫ মিনিট পূর্বে ফিতা কেটে সুপার মলের উদ্বোধন করা হয়। এরপরে কাটা হয় কেক। কেক কাটার পর পাখি অবমুক্তকরণ এবং কবুতর উড়ানোর সময় মাগরিবের আজান শুরু হয়। কয়েকজন আজানের বিরতির কথা বললেও সোলায়মান আলম শেঠ মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে উদ্বোধনের অনূভুতি প্রকাশ করতে থাকেন।

তিনি বলেন , চট্টগ্রামের মানুষের জন্য আমরা শেঠ ফ্যামিলির পক্ষ থেকে এই এই বিশ্বমানের সুপার মলটি উপহার দিয়েছি। আমরা সব সময় জনগণের পাশে থাকতে চাই। গত ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছিলেন চট্টগ্রামের দায়িত্ব উনি নিজের হাতে নিয়েছেন। এরপরে তাঁর সাথে আমার দেখা হলো-তখন উনাকে আমি বললাম, চট্টগ্রামের দায়িত্ব নেয়ায় আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) অসংখ্য ধন্যবাদ। এখন থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়ন হবে। তখন একই সাথে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, শেঠ পরিবারের পক্ষ থেকে সুন্দর একটি সুপার মল উপহার দেয়া হবে।
সুপারমলটির বিশেষত্ব নিয়ে সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, আমাদের চট্টগ্রামের একটি আন্তর্জাতিক মানের সুপার মল করার চিন্তা ছিল। যেখানে একটা ছাদের নিচে সবকিছু থাকবে। আমাদের এখানে যে জায়ান্টস স্ক্রিন আছে সেটি এক হাজার ২০০ বর্গফুটের। বাইরে যেটা আছে সেটিও প্রায় ৬০০ বর্গফুটের। সুপারমলে এসে শিশুদের অ্যামিউজমেন্ট পার্কে দিয়ে নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারবেন। কারণ সেখানে শিশুদের দেখাশোনা করার আয়া থাকবে। এছাড়া আমরা তিনটা সিনেপ্লেক্স করেছি। বাংলাদেশের কোথাও এরকম কাস্টমাইজ সিনেমা হল করেনি। হ্যাঁ, বসুন্ধরায় অনেক বড় বড় হল করেছে। কিন্তু আমাদের থিম ডিফারেন্ট। পুরো চট্টগ্রামে ৭০ লাখ মানুষ আছে। আমরা যদি আমাদের শেঠ পরিবারের পক্ষ থেকে ভালো একটা জিনিস দিই, মানুষ অবশ্যই এটি মনে রাখবে। আমাদের ইচ্ছা ছিল ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই সুপারমলটি উদ্বোধন করার। কিন্তু পারিনি। গত ২৬ মার্চ চেয়েছিলাম, তাও পরিনি। তাই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ২ এপ্রিল করবো। করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা সীমিত পরিসরে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছি। আমাদের আয়োজন ১০ ভাগের একভাগে নিয়ে এসেছি। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ভবিষ্যতে আমরা বড়সড় করে আরেকটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা আছে।

বক্তব্য শেষে তিনি ব্রিফিংয়ের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদেরকে সুপার মলের ২য় তলার কনফারেন্স রুমে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। প্রায় ১৫০ জন সাংবাদিক কনফারেন্স রুমের সামনে গেলে নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীরা রুমের দরজা বন্ধ করে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন এবং বিভিন্ন কটুক্তি করেন। বেশ কয়েকজন সাংবাদিক অপমানবোধ করে চলে যান। প্রায় ২০ মিনিট পর দায়িত্বরত একজন বলেন শুধু ক্যামেরাপার্সন যেতে। ১০ মিনিট পর তিনি বলেন পরিচয়পত্র দেখিয়ে সবাইকে যেতে। কিন্তু ঢুকার সময় এত সাংবাদিক কেন বলে আবারো ধাক্কাধাক্কি করতে থাকেন নিরাপত্তাকর্মীরা। এমন সময় সোলায়মান আলম শেঠ আসার পর সবাই কনফারেন্স রুমে ঢুকে চেয়ারে বসলে শেঠ সাহেবও বসেন।

কয়েকজন সাংবাদিক এমন অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলে শেঠ সাহেবও ক্ষেপে গিয়ে বলেন এত গরম হলে সাংবাদিকতা করা যায় না, আমরাও ভেসে আসিনি। আমার এই বিশাল আয়োজনে যখন হঠাৎ করে প্রশাসন সীমাবদ্ধতা করে দিল তখন তো সবকিছু এলোমেলো হবেই। আবার হঠাৎ করে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই সুপার মল বাংলাদেশের একটি ব্যতিক্রমী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এটা চট্টগ্রামের জনগণের জন্য উপহার। আপনারা ভালো লিখলে ভালো হবে, খারাপ লিখলে খারাপ হবে। দয়া করে সবকিছু ক্ষমা এবং বিনয়ের সাথে দেখবেন। এসময় শেঠকে প্রশ্ন করা নিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লে কনফারেন্স পন্ড হয়ে যায়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক পূর্বকোণের পরিচালনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, শেঠ গ্রুপের সিইও আফতাব আলম শেঠ, ডিরেক্টর ওয়াহিদুল আলম শেঠ, ডিরেক্টর সারিস্ত বিনতে নুর এশনা, অপারেশন ডিরেক্টর টুলু-উশ্‌-শামস্‌, ডিরেক্টর উজায়ের আলম শেঠ, ডিরেক্টর উমায়ের আলম শেঠ, ডিএমডি মোহাম্মদ রোসাঙ্গীর। জয়া আহসান উপস্থিত থাকলেও করোনার কারণে মিডিয়ার সামনে আসেন নি।

মানা হয়নি জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা : করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামে সন্ধ্যা ৬টার পর ওষুধের দোকান (ফার্মেসি) ও কাঁচাবাজার ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। শুক্রবার (২রা এপ্রিল) বিকেলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান এই নির্দেশ দেন । জেলা প্রশাসক বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে চট্টগ্রামের সব শপিং সেন্টার, বিপণি কেন্দ্র, হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখতে হবে। তবে ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার খোলা থাকবে। এ নির্দেশনা অমান্য করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। আর এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ব্যাপক লোক সমাগমের মাধ্যমে রাত ৯টা পর্যন্ত সুপার মলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়া হয়।

এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র জনাব রেজাউল করিম চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি যান নি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print