শুক্রবার, ১৪ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শুক্রবার, ১৪ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার, ১৪ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রমজান ১৪৪৬ হিজরি

ফেনীতে ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যাকারী স্বামী আটক !

প্রভাতী ডেস্ক: ফেসবুক লাইভে এসে এক নারীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও প্রচার করেছে এক যুবক। ভিডিওতে ওই নারীকে হত্যা করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে সবার কাছে ক্ষমা চাইতেও দেখা গেছে ওই যুবককে।

টুটুল ভূঁইয়া নামে একটি ফেসবুক আইডিতে বুধবার (১৫ এপ্রিল) লাইভে আসে ওই যুবক। ভিডিওটি মোট ১ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের। ৫৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৩ সেকেন্ড পর্যন্ত মোট ৮ সেকেন্ড এক নারীকে কোপাতে দেখা যায় ওই যুবককে।

আইডিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী টুটুল ফেনী পাবলিক কলেজের ছাত্র। যুবকটি কোন এলাকা থেকে ফেসবুক লাইভে এসেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ফেসবুক লাইভে এসে ওই যুবককে বলতে শোনা যায়, ‘প্রিয়দেশ দেশবাসী আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আজকে আমার কারণে আমার পরিবার ধ্বংস। যার কারণে ধ্বংস তাকে আজকে এই মুহুর্তে শেষ করে দিলাম। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, পারিনি। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমার এতিম মেয়ের দিকে খেয়াল রাখবেন। আমার ভাই-বোনগুলোর খেয়াল রাখবেন। এই ঘটনায় আমার পরিবার সম্পৃক্ত না। তাদের কোনো দোষ নাই। আমি আমার এই ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী।’

তিনি আরো বলেন, ‘সবার কাছে একটাই অনুরোধ প্লিজ আমার ভিডিওটা ভাইরাল করেন। যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়। আর এই ঘটনার জন্য আমিই একমাত্র দায়ী আর কেউই না।’

লাইভে থাকা অবস্থায় এ কথাগুলো বলেই তিনি এক হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে একজন নারীর মাথার দিকে কোপাতে থাকেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, ৮ সেকেন্ড ধরে তিনি ওই নারীকে কুপিয়েছেন।

তবে কোপানোর সময় তিনি কোন বাধাপ্রাপ্ত হননি। ফলে লাইভে আসার আগেই তিনি ওই নারীকে হত্যা করেছেন কিনা সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। লাইভে থাকা অবস্থায় কোন ধরনের বাধা ছাড়াই তিনি মাটিতে নিস্তেজ অবস্থায় শুয়া ওই নারীকে ৮ সেকেন্ড ধরে উপুর্যপরি কুপিয়েছেন।

কুপানো শেষে তিনি আবারও বলতে শুরু করেন, ‘সব শেষ, সব শেষ, আমার পরিবারকে ব্ল্যাকমেইল করতো। ব্লেকমেইল করে আমার পরিবারটারে। সব সময়ই ব্লেকমেইল করতো। আজকে থেকে আর ব্লেকমেইল করবে না। খোদা হাফেজ সবাই, ভালো থাকবেন। আমার মেয়েটার খেয়াল রাখবেন। আমার মা, বাবা, ভাই বোনগুলোর খেয়াল রাখবেন। যে আমার পরিবারের পিছনে লাগছে আজকে সব শেষ। এই নিষ্ঠুর দুনিয়া নেয়নি আমাকে। সবাই আমারে মাফ করে দিবেন।’ এ কথাগুলো বলে লাইভ থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন ওই যুবক।’

খুন করার লাইভ ভিডিওর পর, একটি মেয়েকে নিয়ে আরেকটি ভিডিও পোস্ট করে টুটুল ভুইয়া। সেখানে তার দাবি, তার মেয়ের যখন ৮ মাস বয়স তখন সে (তার স্ত্রী) ছেড়ে চলে যায়। এখন আবার সে ফেরত এসেছে। তার পুরো পরিবারকে ব্ল্যাকমেইল করে অনেক সমস্যায় ফেলেছে। বাচ্চা মেয়েটাকে অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। এরপর তিনি নিজেও আত্মহত্যার ইঙ্গিত দেয় ওই ভিডিওতে।

এই ঘটনার পরপরই টুটুলকে ফেনীর বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। ফেনী সদর থানার ওসি আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, হত্যায় অভিযুক্ত টুটুল ভুঁইয়ার বাড়ি ফেনী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়াইপুর এলাকায়। টুটুল ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করতো। সন্তানদের নিয়ে তার স্ত্রী বাড়িতেই থাকতো। সে ঢাকায় থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী তাহমিনা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়। তাহমিনা বাড়ি থেকে টাকা চেয়ে মানসিক হয়রানি করা হতো বলে দাবি করেন টুটুল। আটকের পর টুটুল পুলিশের কাছে খুনের কথা স্বীকার করে।

এদিকে, খুন করার লাইভ ভিডিওটি ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর আর টুটুলের ফেসবুক প্রোফাইলে পাওয়া যায়নি। পুলিশ এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, টুটুলের প্রোফাইলে লাইভ ভিডিও তারা পায়নি। তবে, তার পোস্টগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। নিহতের স্বজনরা মামলা করলে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print