Search

শনিবার, ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি

অপহরণ মামলা খারিজ : মায়ের কাছে থাকবো, বাবা চাইলেই দেখা করব- দুই মেয়ে

প্রভাতী ডেস্ক :বাংলাদেশে এসে আইনি লড়াই চালিয়ে সন্তানদের জিম্মা পেলেন জাপানি নারী নাকানো এরিকো; সন্তানরাও তার কাছেই থাকতে চাইছিলেন।

বাংলাদেশের আদালতের রায়ে জাপানি মায়ের জিম্মায় যাওয়া দুই মেয়ের একজন আদালতের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছে, এখন সে ‘নিজ বাড়ি’তে ফিরতে পারবে।

তার বাবা বাংলাদেশি ইমরান শরীফের করা মামলা রোববার (২৯ জানুয়ারি) খারিজ করে রায় দেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কিশোরী মেয়েটি বলেছে, “আজকের এই দিনের জন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি এখন নিজ বাড়িতে ফিরতে পারব। এই রায়ের ফলে আমার মতো ভুক্তভোগীরা ভবিষ্যতে সুরক্ষা পাবে। আমি বাংলাদেশকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

বাবাকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সে বলে, “অবশ্যই বাবাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। তিনি যখনই দেখা করতে চাইবেন, আমি তাকে স্বাগত জানাব।”

রায় ঘোষণার পর সন্তোষ প্রকাশ করে শিশুটির মা নাকানো এরিকো বলেন, “আমি এই দিনটির জন্য দেড় বছর ধরে অপেক্ষা করেছি। আমি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি সত্যিই কৃতজ্ঞ।”

আদালতের রায়ের পর বাবা ইমরান শরীফের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এই রায়ে সংক্ষুব্ধ জানিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, প্রকৌশলী ইমরান শরীফ জাপানে থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে সে দেশের চিকিৎসক নাকানো এরিকোর বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। তাদের ঘরে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২১ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।

মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী। তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক।

কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর ওই বছরের ২১ নভেম্বর হাই কোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন মা নাকানো। পরে আপিল বিভাগ ওই বছর ১৫ ডিসেম্বর এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন।

পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেয়।

এরপর আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেয়, দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে। ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই রায় দেওয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।

এসব ঘটনার মধ্যে ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাতে দুই সন্তান নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন এরিকো নাকানো। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে বিমানবন্দর থেকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় নাকানোর বিরুদ্ধে অপহরণ ও প্রতারণার অভিযোগ এনে গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলা করেন ইমরান শরীফ। সেখানে নাকানোর বিরুদ্ধে দুই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করা হয়। আদালত বাদীর জবানবন্দি শুনে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলে।

এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রোববার ইমরানের মামলাটি খারিজ করে দিল আদালত।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print