সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস চাইলে দামও তেমন দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রভাতী ডেস্ক : শিল্প প্রতিষ্ঠানের মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি আর চালিয়ে না যাওয়ার পক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, “তারা যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায়, তাহলে যে মূল্যে কিনে আনব, সেই মূল্যই তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।”

শিল্পে এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর বুধবার(১৮ জানুয়ারি) সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকার এদিন নির্বাহী আদেশে শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ায় প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ১৯ টাকা পর্যন্ত। তবে গৃহস্থালিতে রান্নার গ্যাস এবং গাড়ি চালাতে ব্যবহৃত সিএনজির দাম বাড়ানো হয়নি।

কয়েক দিন আগে বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হয়। ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ডলার সঙ্কটে পড়া বাংলাদেশ সরকারের আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হল।

বুধবার সংসদে জাতীয় পর্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু অনির্ধারিত আলোচনায় দাঁড়িয়ে এই প্রসঙ্গ তোলেন।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান- “আইএমএফের ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ দেশে আলোচিত। এই ঋণ পেতে কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে। এই ঋণের কারণে ইতোমধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ঋণের কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। এতে করে কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে উৎপন্ন পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতির উপর চাপ বাড়বে। এই চাপ সরকার কীভাবে মোকাবেলা করবে?

তার জবাবে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা প্রথমেই বলেন, “আইএমএফ তখনই ঋণ দেয়, যখন ওই দেশ ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা অর্জন করে। এখানে আমরা তেমন কোনো শর্ত দিয়ে ঋণ নিইনি।”

গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমার প্রশ্ন হলো পৃথিবীর কোন দেশ গ্যাস আর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়? কেউ দেয় না।”

ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে সারাবিশ্বে জ্বালানির বাজার চড়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “ইংল্যান্ডে ১৫০ ভাগ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে এই ইউক্রেইন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর। আমরা তো মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ালাম আর বাল্কে কিছু গ্যাসের দাম। এলএনজি আমরা যেটা ৬ ডলারে স্পট প্রাইসে কিনতাম, সেটা এখন ৬৮ ডলার।

“কত ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকিটা দেবে, সেটা তো জনগণেরই টাকা। গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণ, বিদ্যুত উৎপাদন ও বিতরণে যদি ৪০, ৫০ ও ৬০ হাজার কোটি টাকা আমাকে ভর্তুকি দিতে হয়, তাহলে সেটা কী করে দেব?”

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “যারা বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী আছেন, এখানেও (সংসদে) আছে, তাদের আমি তো স্পষ্ট বলেছি, গ্যাস আমি দিতে পারব, কিন্তু যে মূল্যে গ্যাস আমরা বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসলাম, সেই মূল্য যদি আপনারা দেন, আমরা গ্যাস দিতে পারব।

“এটা ভুলে যাবেন না ভর্তুকির টাকা তো জনগণেরই টাকা। যত মূল্য কম থাকে, তাতে তাদের আমাদের বিত্তশালীরা লাভবান হন। বিত্তশালীরা আরাম-আয়েশ করবে, আর স্বল্প মূল্যে পাবে, তা কী করে হয়? সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা নিচ্ছি।”

এই সংকটকালে সবাইকে জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনে বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। এভাবে যদি সবাই উদ্যোগ নেয়, তাহলে বিদ্যুত ব্যবহার সাশ্রয়ী হতে পারে।”

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপও সংসদে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা নিম্ন আয়-মধ্যম আয়ের যারা, তাদের জন্য টিসিবির ফেয়ার প্রাইস কার্ড দিয়ে দিয়েছি। যেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারে। তেল, চিনি, ডাল সীমিত আয়ের মানুষ ন্যয্য মূল্যে কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি। এর থেকে যারা নিম্ন আয়ের, তাদের জন্য ১৫ টাকায় চাল আমরা দিচ্ছি। সেই সাথে তেল, ডাল ও চিনিও দেওয়া হচ্ছে।

“আর একেবারে হতদরিদ্র, যারা কিছুই করতে পারে না। তাদেরকে বিনাপয়সায় খাদ্য সরবরাহ করছি। স্বল্প আয়ের মানুষ যাতে কষ্টে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রেখে এই ব্যবস্থা করছি। কৃষিতে আমরা ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিচ্ছি।”

সংকটের গভীরতা বোঝাতে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ হচ্ছে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি। এটা একটা উন্নত দেশের কথা বললাম। পৃথিবীর সব দেশে এই অবস্থা বিরাজমান। বাংলাদেশ এখনো সেই অবস্থায় পড়েনি।”

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে এম এ লতিফের মৌখিক প্রশ্নের দীর্ঘ ১৭ পৃষ্ঠার জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে উত্তর দেওয়ার এক পর্যায়ে বাকি অংশ পঠিত বলে গণ্য করার অনুরোধ করেন তিনি, যা গৃহীত হয়।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন করোনাভাইরাস মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে; বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। অন্যান্য সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক নেতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সংকটের আশঙ্কা তৈরি হযেছে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্য সংকটের আশঙ্কার পরিস্থিতিতে দেশে যেন সঙ্কট সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া বিস্তারিত ব্যবস্থাও তুলে ধরেন তিনি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print