
নিজস্ব প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জে যুবদলকর্মী শাওন প্রধান নিহতের ঘটনায় তার পরিবারের দাবি, তারা কোনো মামলা করেনি।কিন্তু পুলিশ বলছে, শাওন নিহতের ঘটনার পর তার বড় ভাই মিলন প্রধান বাদী হয়ে বিএনপির ৫ হাজার নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছে।
এ বিষয়ে শনিবার মিলন প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে নবীনগরে তাদের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।পরে তাদের আরেক ভাই ফরহাদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বিএনপির বিরুদ্ধে তারা কোনো মামলা করেননি।
এ সময় শোকাহত শাওনের মা জানান, তার একটাই দাবি হত্যাকারী যেই হোক, ন্যায় বিচার চান তিনি।
শাওন নিহতের পর পুলিশি পাহারায় তাকে দাফন করা হয়েছে।আত্মীয়- স্বজনদের জানাজায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্বজন ওপ্রতিবেশীদের।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একজন এসআইয়ের গুলিতে শাওন মারা গেছে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু স্থির চিত্রে দেখা গেছে, একটি চায়নিজ রাইফেলের ম্যাগাজিনে বুলেট লোড করছেন এবং গুলি ছুঁড়ছেন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমান। যদিও ওই অস্ত্র তার নামে ইস্যুকৃত নয়। এমনকি কার অস্ত্র তিনি ব্যবহার করেছেন এবং সেটি কারো নামে বৈধ নাকি অবৈধ অস্ত্র সে বিষয়েও কোনো তথ্য দেয়নি পুলিশ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন সাংবাদিকও মনে করছেন, শাওন পুলিশের গুলিতেই মারা গেছেন।তিনি দাবি করেছেন সেদিন বিএনপির কোনো নেতাকর্মীর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না।
স্বজনরা বলছেন, শাওনের বুকের বাম পাশে ছোট একটি ছিদ্র এবং পিঠে দুটি বড়ো ছিদ্র রয়েছে।তাদের ধারনা চায়নিজ রাইফেলে ছোঁড়া গুলি বুক দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে গেছে।
শাওন নিহতের ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে পরিবারের অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এছাড়া এসআইয়ের হাতে থাকা অস্ত্রের বিষয়ে জানার জন্য জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি।
শাওন নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকে বিএনপি তাকে যুবদল কর্মী হিসেবে দাবি করে আসছিল। আবার আওয়ামী লীগও তাকে যুবলীগের কর্মী দাবি করে আসছিল।তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এবং শাওনের ফেসবুক আইডি ঘেঁটে জানা গেছে, তিনি যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তিনি যুবদলের কমিটিতে পদ পাওয়ার চেষ্টাও করছিলেন। এজন্য যুবদলের যে কোনো মিটিং মিছিলে অগ্রভাগে থাকতেন শাওন।
শাওনকে যুবলীগ কর্মী দাবি করে শুক্রবার মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। সেদিন সন্ধ্যায় নবীনগর এলাকায় নিহত শাওনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা এই মিছিলে অংশ নেন।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ নগরীর ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। এ সময় ২ নম্বর রেল গেইট এলাকায় পৌঁছালে সেখানে দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। এতে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ওই পুলিশ সদস্যদের বাদানুবাদ হয়। এতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন নেতা-কর্মীরা। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া। এক পর্যায়ে গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। এতে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হওয়া শাওন মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। অন্য নেতাকর্মীরা শাওনকে হাসপাতালে নিলে সেখানে তিনি মারা যান।
শাওন যুবদল কিংবা যুবলীগ যে দলেরই হোক না কেন তার হত্যার বিচার যেন নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে হয় সেই দাবি এলাকাবাসীর।