শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ১২ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

চট্টগ্রামে মরদেহে বিকৃত যৌনাচার: গ্রেফতারকৃত সেলিম ছিলেন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের আসামি

নিজস্ব প্রতিবেদক: মরদেহের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গের পাহারাদার মো. সেলিম (৪৮)। তিনি আগেও একটি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। থানা পুলিশ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলেও বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত থেকে খালাস পেয়েছিলেন তিনি।

গত সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এক নারী ও এক কন্যাশিশুর মরদেহ ধর্ষণের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তিনি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মৃত নোয়াব আলীর ছেলে। চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট খাজা রোড এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন সেলিম। তিনি অস্থায়ী ভিত্তিতে হাসপাতাল মর্গের পাহারাদার হিসেবে কাজ করতেন।

এদিকে বিকৃত যৌনাচারের ঘটনায় সেলিমের বিরুদ্ধে নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা হয়েছে। মামলার বাদী সিআইডি কর্মকর্তা এজাহারে সেলিমের বিরুদ্ধে আগেও একটি নারী নির্যাতন আইনের মামলা ছিল বলে উল্লেখ করেন। এরপর তার ওই মামলাটির বিষয়ে আদালতে খোঁজ নেওয়া হয়।

সেখানে মামলাটির এজাহারে দেখা যায়, ঘটনাটি ২০১৭ সালের ১৫ আগস্টের। ঘটনাস্থল চমেক মর্গের পাশের এলাকা। ওইদিন চকবাজার এলাকার এক নারীকে বাসা থেকে বের করে দেয় তার স্বামী। অসহায় নারী সহায়তা চান মর্গের পাশে সাজু নামের এক লোকের কাছে। তিনি সহায়তা করার নামে ভুক্তভোগী নারীকে নিয়ে যান চমেক মর্গের পাশে একটি পরিত্যক্ত জায়গায়। কিছুক্ষণ পর সেখানে যায় সেকান্দার ও সেলিম। এরপর ওই নারীকে প্রথমে সেলিম ও সেকান্দার এবং পরে সাজু দাশ তাকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করেন।

এ ঘটনার দুদিন পর ১৭ আগস্ট ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় সেলিম, সেকান্দার এবং সাজুকে। এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়ে তিন আসামির মধ্যে সাজু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি ভুক্তভোগী নারীকে ৩জনে মিলে ধর্ষণ করেছেন বলে উল্লেখ করেন। এরপর আলোচিত মামলাটির তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর এজহারে থাকা তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা রায় ঘোষণা করেন। এতে সাজু দাশ নামের এক আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া মামলার আসামি সেকান্দার ও সেলিম নামের অপর দুজনকে খালাস দেওয়া হয়।

খালাসের বিষয়টি জানতে চাইলে বুধবার (২ মার্চ) সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের ওই সময়কার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে সেদিন সেকান্দার ও সেলিম খালাস পেয়েছিলেন। কারণ আমরা ভুক্তভোগী নারীকে পর্যন্ত বিচারিক প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য দেওয়াতে পারিনি। সাজুর সাজা হয়েছে কারণ তিনি আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় খালাস পেলেও সেলিম অভিযুক্ত হয়েছেন বিকৃত যৌনাচারে। তার বিরুদ্ধে ৩২ বছর বয়সী এক নারী এবং ১২ বছর বয়সী এক কন্যাশিশুর মরদেহের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারের প্রমাণ পায় সিআইডি। এরপর সোমবার চমেক হাসপাতাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

একই দিন তার বিরুদ্ধে নগরের পাঁচলাইশ থানায় সিআইডি চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রো ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কৃষ্ণ কমল ভৌমিক বাদী হয়ে দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটিতে আদালতের আদেশে রিমান্ডে আছেন তিনি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print