শুক্রবার, ১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শুক্রবার, ১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার, ১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

সরকারকে সন্তুষ্ট করতে উদ্যোগী হেফাজত, মেনে নিল সরকারের সকল শর্ত

প্রভাতী ডেস্ক : সারা দেশে নজিরবিহীন তাণ্ডবের পর সরকারের কঠোর অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা সরকারকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে যে ৩ দফা শর্ত দেওয়া হয়েছিল তার প্রায় পুরোটাই দৃশ্যত মেনে নিয়ে বাস্তবায়নে নেমে পড়েছে হেফাজত। অবস্থান পরিষ্কার করতে হেফাজতের শীর্ষ নেতারা ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দুই দফা দেখা করে তাদের নানা পদক্ষেপের কথা সরাসরি জানিয়েছেন।

এছাড়া সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হেফাজত নেতারা চার দফা দাবি পেশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন নির্দেশনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

বলা হয়েছে হেফাজতের কোনো নেতাকর্মী যদি প্রকৃত অর্থেই দোষী হন তাহলে তাকে ছাড় দেওয়া যাবে না। তবে কোনো নিরপরাধ নেতাকর্মীকে হয়রানি করা যাবে না।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বুধবার(৫ মে) বিকালে সরকারের নতুন নির্দেশনার কথা স্বীকার করেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে সেগুলো মামলার গতিতেই চলবে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন দোষী সাব্যস্ত না হন সে বিষয়টি নিশ্চিত করে তদন্ত শেষ করার নির্দেশনা পেয়েছি। গত ১৯ এপ্রিল গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে হেফাজত নেতাদের ৩টি শর্ত দেওয়া হয়। তার অন্যতম ছিল-সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী তাণ্ডবের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়া। ওইদিনই হেফাজতের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আমির ও আহ্বায়ক কমিটির প্রধান জুনায়েদ বাবুনগরী দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন।

দ্বিতীয় শর্ত ছিল- মাদ্রাসা শিক্ষার ছয়টি বোর্ডকে এক করে হাইআতুল উলিয়ার (কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ একাডেমিক সংস্থা) নেতৃত্বে একটি শিক্ষা বোর্ড বা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে হবে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল এক বিবৃতিতে বলা হয়, হেফাজতে ইসলাম নয়, এখন থেকে কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কিত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে আল হাইআতুল উলিয়া। এছাড়া কওমি মাদ্রাসার সব ছাত্র এবং শিক্ষককে রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকার শর্তও ঘোষণা দিয়ে মেনে নেওয়া হয়েছে।

তৃতীয় শর্ত ছিল-রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নেতারা হেফাজতের রাজনীতির সঙ্গে থাকতে পারবে না। এতে রাজি হয়ে ইতোমধ্যেই হেফাজত তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে। জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে হেফাজত নেতারা চার দফা দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো-সম্প্রতি সারা দেশ থেকে যেসব আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে ও আর যেন গ্রেফতার হয়রানি না করা হয়। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নামে করা মামলাগুলো যেন প্রত্যাহার এবং দ্রুত কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানও উপস্থিত ছিলেন। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হেফাজত নেতারা যেসব কাজ করেছেন সেসবে কিছু কাজ ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীরা এসব জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর করেছে। তারা তাদের গ্রেফতার নেতাকর্মীদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

বুধবার(৫ মে) বিকালে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, হেফাজতের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। এখনই কোনো সিদ্ধান্ত আমরা জানাইনি। উনারা বলছেন, সবার কাজেই তো কিছু ভুল হয়। আর জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর এসব অনুপ্রবেশকারীরা করেছে। আমরা বলেছি, ভিডিও ফুটেজ দেখে ধরা হচ্ছে। আবার সন্দেহজনকভাবে কাউকে আটক করা হলে তাদের আবার ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

হেফাজতের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য কি ছিল জানতে চাইলে বৈঠক সূত্র গণমাধ্যমকে বলেছেন, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, আইন মেনে তাদের মুক্ত হতে হবে। আদালত কোনো নেতাকর্মীকে জামিন দিলে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি থাকবে না। নিরপরাধ কোনো ব্যক্তিকে হয়রানি বা গ্রেফতার করা হবে না বলে হেফাজত নেতাদের নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেছেন, ২০১৩ সালে হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোর তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করা হবে।

এ ক্ষেত্রে যেসব মামলায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে না সেগুলোতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আর যেসব মামলায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে সেগুলোতে চার্জশিট দেওয়া হবে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার সাংবাদিকদের জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাণ্ডবে জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে। যারা নাশকতায় জড়িত ছিল, উসকানি দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, মন্ত্রী আমাদের কথা শুনেছেন। আশ্বাসও দিয়েছেন। আগামীতে আরো আলোচনা হবে। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া।

২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে সমাবেশ ডেকে আলোচনায় আসে হেফাজত। এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদ এবং হরতালকে ঘিরে মার্চের শেষের দিকে দেশব্যাপী তাণ্ডব চালায় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় কঠোর অবস্থানে যায় সরকার। পরে সমঝোতার দিকে অগ্রসর হয় সংগঠনটি। এরপর থেকে গোয়েন্দাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয় হেফাজত নেতাদের।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print