Search

মঙ্গলবার, ১১ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মঙ্গলবার, ১১ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, ১১ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি

যে কারণে ৭ বছরের প্রেম ও ২৭ বছরের সংসার ভাঙ্গলো বিল গেটস-মেলিন্ডার

প্রভাতী ডেস্ক : সোমবার (৩ মে) আচমকা খবর এলো বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও মাইক্রসফট কর্ণধার বিল গেটস ও তার স্ত্রী মেলিন্ডা গেটসের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।  ২৭ বছর ঘর করার পর এই দম্পতির হঠাৎ বিচ্ছেদের ঘোষণা অবাক করেছে বিশ্ববাসীকে।  এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় বয়ে যাচ্ছে।  অনেকেরই প্রশ্ন এতো দিন সংসার করার পর কেন তাদের মনে হলো আর একসঙ্গে পথচলা সম্ভব নয়? কী এমন ঘটেছে বিল ও মেলিন্ডার মধ্যে।

এই প্রশ্নের উত্তর এত দ্রুত ও সহজে জানা সম্ভব নয়। সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তরও তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। এছাড়া এই দুজন বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপক গোপনীয়তা অবলম্বন করেছেন।

মূলত প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন বিল ও মেলিন্ডা গেটস।  কাজের সুবাদে তাদের পরিচয়। পরিচয় থেকে পথচলা। ৭ বছর প্রণয়ের পর দুজন ঠিক করেন এক ছাদের নিচে থাকবেন। এভাবে কেটে গেছে ২৭ টি বছর। এই সময়ে তাদের ঘর আলো করে এসেছেন তিন সন্তান।  সেই সম্পর্ককে আর বয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না ধনকুবের এই দম্পতি।

বিয়ে বিচ্ছেদের কারণ সুস্পষ্টভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে দুজন দুজনের পৃথিবী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।  কেউ কাউকে সময় দিতে পারছিলেন না। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। বছর দুয়েক আগে মেলিন্ডা বলেছিলেন, ‘তাদের বিয়েটা বেশ কঠিন পর্যায়ে ঠেকেছে। বিল নিয়মিত দিনের ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন। পরিবারের জন্য তার সময় বের করা দুঃসাধ্য হয়ে যায়।’

২০১৯ সালে ২৫তম বিবাহবার্ষিকীতে সানডে টাইমসকে তিনি এ কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের পথেই হাটলেন এই সেলিব্রেটি।

মেলিন্ডা আরো জানান, কাজ এবং পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবেন কি না তা নিয়ে ব্যাপক মাত্রায় সন্দিহান ছিলেন বিল গেটস। এমনকি তিনি হোয়াইট বোর্ডে বিয়ের ভাল মন্দ দিকগুলো লিখতে শুরু করেন।

এতটা মেপে সিদ্ধান্ত নেওয়া মানুষটি এবার বিয়ের সম্পর্ক থেকে ইস্তফার ঘোষণা দিলেন।

বিচ্ছেদের ঘোষণার আগে আদালতের দারস্থ হয়েছেন বিল ও মেলিন্ডা। তার সহায় সম্পত্তি ভাগাভাগির দায়িত্ব আদালতের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন এই ধনকুবের দম্পতি।

বিচ্ছেদের পর ইনস্টাগ্রামে বিল ও মেলিন্ডা গেটসের বড় মেয়ে জেনিফার গেটস লিখেছেন, ‘আমাদের পুরো পরিবারের জন্য একটা দুঃসময় ছিল।’ জীবনের পরবর্তী ধাপে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি বোঝার জন্য সবাইকে অগ্রিম ধন্যবাদ দেন গেটস দম্পতির বড় মেয়ে জেনিফার।

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, বিল গেটস ও মেলিন্ডার সম্পর্কের শুরুটা ছিল পেশাভিত্তিক। ১৯৮৭ সালে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছিলেন মেলিন্ডা। এরপর দুজনের মধ্যে জানাশোনা শুরু হয়।

এরপরের গল্প দুজনের সামনে এগিয়ে যাওয়া। শুরু হয় দুজনের চুটিয়ে প্রেম। নেটফ্লিক্সে প্রচারিত এক তথ্যচিত্রে বিল গেটস বলেছেন, ‘আমরা একে অপরের খুব খেয়াল রাখতাম। এখানে দুটি সম্ভাবনা ছিল। হয় আমাদের প্রেমে বিচ্ছেদ হবে, নয়তো আমাদের বিয়ে করতে হবে।’

মেলিন্ডা বলেন, তিনি বিল গেটসকে একজন সুশৃঙ্খল মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করেছিলেন। এমনকি তাকে বিয়ে করার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিও দিয়েছিলেন গেটস—এমনটাই জানিয়েছিলেন মেলিন্ডা।

এরপর প্রেম আরো গভীর হয়েছে। প্রেম শুরুর সাত বছর পর ১৯৯৪ সালে তারা এক ছাদের নিচে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

হাওয়াই দ্বীপের লানাইয়ে হয়েছিল সেই আয়োজন। এরপর মাইক্রোসফট বড় হয়েছে। কিন্তু গত বছর তারা এ প্রতিষ্ঠান থেকে অবসরে যান, ব্যস্ত হয়ে পড়েন দাতব্যকাজে।

এজন্য ২০০০ সালে দুজনে মিলে গড়ে তোলেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।  এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতব্য সংস্থা। এ ফাউন্ডেশন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে সংক্রামক রোগব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই ও শিশুদের টিকাদানে উৎসাহিত করতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে এ ফাউন্ডেশন।

কিন্তু যে পথ বেঁধে দিয়েছিল বন্ধন, তার বিচ্ছেদের ঘোষণা এল সোমবার। দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে গেল বেঁকে। দীর্ঘ ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছেন বিল ও মেলিন্ডা।  টুইটার বার্তায় তারা এ ঘোষণা দিয়েছেন।

সোমবার টুইটারে পোস্ট করা যৌথ বার্তায় গেটস দম্পতি বলেন, ‘ব্যাপক চিন্তাভাবনা করে আমরা বিয়ের সম্পর্কের সমাপ্তি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এছাড়া টুইটবার্তায় বিল গেটস ও মেলিন্ডা বলেন, ‘গত ২৭ বছরে আমরা অসাধারণ তিনটি সন্তান পেয়েছি। এমন একটা ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছি, যে ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে মানুষের স্বাস্থ্য ও সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। আমরা যে বিশ্বাস থেকে ফাউন্ডেশনটি চালু করেছি, সেটা থাকবে। এই ফাউন্ডেশনের কাজ একসঙ্গে চালিয়ে যাব। কিন্তু আমরা এটা আর বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমাদের জীবনের পরের ধাপে দম্পতি হিসেবে আমরা একসঙ্গে থাকতে পারব।’

গেটস দম্পতির তিন সন্তান- জেনিফার (২৫), রোরি (২১) ও ফোয়েব (১৮)।

সাম্প্রতিক বছরগুলোর মাঝে পৃথিবীর শীর্ষ ধনী দম্পতির বিচ্ছেদের দ্বিতীয় ঘটনা এটি। ২০১৯ সালে বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজস তার স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি স্কটের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান। বিচ্ছেদের ফলে বেজসের স্ত্রী বিশ্বের চতুর্থ ধনী নারীতে পরিণত হন। ৩৮ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ সম্পত্তি পান ম্যাকেঞ্জি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print