সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি : রং পাল্টিয়েও রক্ষা হলো না ঘাতক কার্গোর

প্রভাতী ডেস্ক : শীতলক্ষ্যায় লঞ্চ ডুবিতে ৩৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় রং পাল্টিয়েও শেষ রক্ষা হলো না ঘাতক কার্গোর। আটক করা হয়েছে কার্গোটিকে। এ সময় কার্গোটির চালকসহ ১৪ জনকে আটক করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনার পরপরই গজারিয়ায় শীতলক্ষ্যা নদীতে নোঙর করা অবস্থায় কার্গোটির রঙ করা হয়। কেউ যাতে কার্গোটি চিনতে না পারে সেজন্য রঙ করানো হয়। কার্গোটির নামও মুছে ফেলা হয়।

এ ব্যাপারে কোস্টগার্ডের পাগলা স্টেশনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট আশমাদুল ইসলাম বলেন, যাত্রীবাহী লঞ্চটিকে ধাক্কা দেওয়ার পর কার্গোটি দ্রুত গজারিয়ায় চলে যায়।

গজারিয়ার কোস্টগার্ড স্টেশনের কাছাকাছি কার্গোটি নোঙর করা হয়। তবে সেটির রঙ বদলে ফেলা হয়। অভিযান চালিয়ে ঘাতক এসকেএল-৩ কার্গোটিকে জব্দ করা হয়।

জানা গেছে, কার্গোটির মালিক সরকারদলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) হওয়ায় সেটি জব্দ এবং অভিযুক্তদের আটক না করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়।

বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে করা মামলায় কার্গোর চালকসহ কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় মামলাটি করেন বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) বাবুলাল বৈদ্য।

হত্যার উদ্দেশ্যে বেপরোয়া গতিতে পণ্যবাহী কার্গোটি চালিয়ে লঞ্চটি ডুবিয়ে ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

এদিকে, লঞ্চটির মালিকপক্ষ বলছে, বুধবার সারা দিন থানায় থানায় ঘুরেও তারা মামলা করতে পারেন নি। লঞ্চডুবির সময় সাবিত আল হাসানের মাস্টার জাকির হোসেন আহত হন।

চিকিৎসা নিয়ে তিনি বুধবার মামলা করতে আসেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ নৌ থানা ও বন্দর থানা পুলিশ তাকে ফিরিয়ে দেয়।

দুই তদন্ত কমিটির গণশুনানি : কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় জেলা প্রসাশক ও নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের গঠিত দুই তদন্ত কমিটির গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঘটনাস্থলে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গণশুনানি করেন তদন্ত কমিটির প্রধান নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুস সাত্তার শেখ।

তিনি জানান, লঞ্চ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শী ২০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সব বিচার বিশ্লেষণ করে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

গণশুনানিতে জেলা প্রশাসকের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খাদিজা তাহেরা ববি, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা বারিক, ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লঞ্চ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যাত্রীরা চিৎকার করে থামতে বললেও কার্গোটি থামেনি। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকার বাসিন্দা ও বেঁচে যাওয়া যাত্রী আলো জানান, কার্গোটি আমাদের বহনকারী লঞ্চটিকে ধাক্কা মেরে ডুবিয়ে দেয়। অনেক কষ্টে সেদিন প্রাণে বেঁচেছি।

কার্গোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার দাবি করেন তিনি। দুর্ঘটনার সময় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুতে গার্ডের দায়িত্ব পালন করছিলেন সিরাজদিখানের আনিস। তিনি জানান, কার্গোটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। সেটিকে থামাতে তিনি তিনবার সংকেত দিয়েছিলেন।

কিন্তু থামানো হয়নি। তিনবার ধাক্কা দিয়ে কার্গো লঞ্চটিকে ডুবিয়ে দেয়। বন্দরের কদম রসুল এলাকার সাইরুল জানান, তিনি স্ত্রী ও শ্যালিকা জিবুকে নিয়ে মুন্সীগঞ্জ যাচ্ছিলেন।

কার্গেটি লঞ্চের বাম দিক দিয়ে ধাক্কা দেয়। এরপর লঞ্চটি ডান দিকে কাত হয়ে ডুবে যায়। তিনি ও তার স্ত্রীকে একটি নৌকা উদ্ধার করে। কিন্তু শ্যালিকা জিবু পানিতে তলিয়ে যায়।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print