Search

শনিবার, ৮ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ৮ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ৮ই নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি

চট্টগ্রাম কারাগারে আসামিকে নির্যাতন: জেল সুপার এবং জেলারকে আসামী করে আদালতে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি এক হাজতিকে বৈদ্যুতিক শক, কিল-ঘুষি, লাথি ও বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জিআর মামলায় হাজতি হিসেবে বন্দি থাকা ওই ব‌্যক্তির নাম রূপম কান্তি নাথ।

মঙ্গলবার (২রা মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের জেল সুপারসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে দায়েরকৃত অভিযোগটির শুনানি হয়।

শুনানি শেষে অভিযোগটি উপযুক্ত আদালতে পুনরায় দাখিলের আদেশ দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসাইন মোহাম্মদ রেজার আদালতে এই অভিযোগের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগের বাদি হাজতি আসামি রূপম কান্তি নাথের স্ত্রী ঝর্ণা রাণী দেবনাথ।

বাদির আইনজীবী ভুলন লাল ভৌমিক জানান, ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর ভিকটিম রূপম কান্তি নাথ জিআর ৩৩২/১৮ নম্বর মামলায় সুস্থ অবস্থায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সম্মতি আদায় এবং স্মৃতি শক্তি নষ্ট করার জন্য অভিযুক্ত বিবাদিদের পরস্পরের যোগসাজসে চট্টগ্রামের কারাগারের সাঙ্গু ১ নম্বর ভবনে গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ ও ২৫ তারিখের যেকোন সময় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বৈদ্যুতিক শক ও বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে কারাবন্দি রূপম কান্তি নাথকে হত্যা চেষ্টা করা হয়। রূপমকে হাসপাতালে ভর্তি ফাইলের একটি মেডিকেল নোটে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে, মাল্টিপল ব্রুইস ইন হোল বডি।

কারাগারে নির্যাতনের শিকার হওয়ার খবর পেয়ে রূপম কান্তি নাথের স্ত্রী ঝর্ণা রানীর পক্ষে আইনজীবী ভুলন লাল ভৌমিক কারাগারে আসামির সঙ্গে দেখা করেন। পরে রূপমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নির্দেশনা চেয়ে মহানগর জজ আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী।
আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে চট্টগ্রাম মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের এমএক্স ১২ নম্বর বেডে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর বাদি ঝর্ণা হাসপাতাল পরিচালকের কাছে আলামত সংগ্রহ করে রাখতে আবেদনও করেন।

ভুক্তভোগীর স্ত্রী ঝর্ণারানী দেবী গত শনিবার জানান, আমার স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করার একদিন পর তাঁর অসুস্থ হওয়ার সংবাদ জানানো হয়। তিনি বলেন, গুরুতর আহত আমার স্বামীকে পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়েই হাসপাতালে আনা হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালে ভর্তি করার পরও দুইদিন রূপম ডান্ডাবেড়ি পরিহিত ছিলেন। রূপমের আইনজীবী বিশ্বজিত চক্রবর্তী বলেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে খবর পেয়ে আমি হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে রূপমের পায়ে ডান্ডাবেড়ি দেখতে পাই। তিনি বলেন, এসময় আমি পাহারারত ৩ কারারক্ষীকে ডান্ডাবেড়ি পরানোর ব্যাপারে জানতে চাই। তারা উত্তরে বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়েছেন। আমাদের কিছু করার নেই।

আদালতসূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল কোতোয়ালী থানায়  রতন ভট্টাচার্য নামের এক ব্যবসায়ীর দায়ের করা জালিয়াতি ও আত্মসাতের (৪০৬/৪২০) মামলায় রূপম ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন। আত্মসাতের মামলায় তিনি চুক্তিমতো টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ওইদিন আদালত তাঁর জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান।

আসামির স্ত্রী ঝর্ণা রানী অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে কারাগারে বৈদ্যুতিক শক ও বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়। রূপম কান্তিনাথের মুখ, হাতসহ সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার অণ্ডকোষে আগুনের ছ্যাঁকার চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুরো অণ্ডকোষ, পুরুষাঙ্গসহ বিভিন্ন স্থান আগুনে ঝলসে গিয়ে মাংসপিণ্ড খসে পড়ার মতো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া রোগীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এ নির্যাতনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার, জেলার, জেলখানার কর্তব্যরত এক সহকারী সার্জন এবং সাতকানিয়া উপজেলা কালিয়াইশ ইউনিয়নের মৃত বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্যের ছেলে রতন ভট্টাচার্যকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

মঙ্গলবার (২ মার্চ) বিকেলে এই অভিযোগের শুনানী শেষে অভিযোগটি উপযুক্ত আদালতে দাখিল করার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

মুমূর্ষু হাজতি রোগীতে ডান্ডাবেড়ি পরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল বলেন- ডাকাতি, হত্যাসহ তিন বা ততোধিক মামলার দুর্ধর্ষ আসামিকে কারাগারের বাইরে নেয়া হলে নিরাপত্তার খাতিরে সচরাচর ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়। আর কারা অভ্যন্তরে আহত হলে এমনকি আত্মহত্যাসহ যে কোন ঘটনার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকেই জবাবদিহি করতে হয়। কারাগারে আহত হলে তার জন্য সুষ্ঠু তদন্ত  করে দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ কারাগারের ভেতরটা সবসময় নিরাপদ থাকার নিয়ম। তার ব্যত্যয় ঘটলে কারা কর্তৃপক্ষের প্রতি জনগণ আস্থা হারাবে।

সাবেক মহানগর পিপি এডভাকেট আবদুস সাত্তার বলেন, কারা অভ্যন্তরে একজন হাজতি বা কয়েদি সব সময় নিরাপদ থাকবেন। ব্যতিক্রম কিছু হলে তার জন্য কারা কর্তৃপক্ষই দায়ী হয়।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print