রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ১৩ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

ব্যবসায়ীকে গুলি ও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা: কথিত সাংবাদিকসহ চক্রের ৫ সদস্য আটক

ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও কথিত সাংবাদিক ইফতেখার

প্রভাতী ডেস্ক : চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে গুলি ও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন এই চক্রের ৫ জন। এদের মধ্যে ২ জন নিজেদের ‘সাংবাদিক’ ও অন্য ১জন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের গাড়িচালক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। শনিবার (২০শে ফেব্রুয়ারী) রাতে জাকির হোসেন সড়কে ‘হেয়ার এন্ড ফেয়ার’ নামের এক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। এই প্রতিষ্ঠানে মাথার টাকে চুল গজানোর চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এই ঘটনার মাধ্যমে হেয়ার এন্ড ফেয়ারের মালিক মো. মান্নান শেখকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে সিএমপির ডিবি পুলিশের সোর্সকেও ব্যবহার করে তারা। ঘটনায় আটক ৫ জন হলেন আনোয়ারা থানাধীন তৈলারদ্বীপ এলাকার এনামুল করিম চৌধুরীর ছেলে ইফতেখার করিম চৌধুরী (৪৮), কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানাধীন মালিকা এলাকার আবদুল আলীমের ছেলে মো. সোহেল (২৬), নেত্রকোনা জেলার সদর থানাধীন মুন্সিবাড়ি এলাকার মৃত ফজলুল করিমের ছেলে মো. ফয়সাল (২০), কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানাধীন বসন্তপুর এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৪২) ও চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানাধীন বিতারা এলাকার মো. বেলাল হোসেনের ছেলে মো. জামাল হোসেন (৪১)। এদের মধ্যে ইফতেখার করিম চৌধুরী নিজেকে দৈনিক মুক্ত খবরের স্টাফ রিপোর্টার ও একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের আত্মীয় এবং নজরুল ইসলাম নিজেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের গাড়িচালক হিসেবে পরিচয় দেন।

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মুহাম্মদ আলী হোসেন জানান, ‘শনিবার আমাদের কাছে তথ্য আসে হেয়ার অ্যান্ড ফেয়ার নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইয়াবা ও গুলি রয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সেখানে অভিযান চালাই। তথ্য অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানের সোফার নিচ থেকে ২০০ পিস ইয়াবা ও ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিক ওই প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করি। সিসিটিভি ফুটেজে তখন সেখানে সোফায় বসা এক যুবককে সোফার নিচে ইয়াবা ও গুলি রাখতে দেখা যায়। সেখান থেকেই মো. ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। মূলত ইয়াবা ও গুলি রাখার পর ফয়সাল সেখানে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিল যাতে কেউ সেগুলো সরাতে না পারে। আটকের পর ফয়সাল জানায় ৫০০ টাকার বিনিময়ে সোহেল তাকে ইয়াবাগুলো সেখানে রাখতে দিয়েছে। তখন টাইগারপাস থেকে সোহেলকে আটক করি। পরে সোহেলের দেওয়া তথ্যমতে রাতভর অভিযানে বাকিদের একের পর এক গ্রেপ্তার করি।’

এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) শাহ মো. আবদুর রউফ বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া যুবকরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেয়ার অ্যান্ড ফেয়ারের মালিক মো. মান্নান শেখকে ফাঁসানোর জন্য সেখানে ইয়াবা ও গুলি রেখেছে বলে স্বীকার করেছে। এই পুরো পরিকল্পনাটা করেছে ইফতেখার করিম চৌধুরী। তবে তারা কী কারণে এটি করেছে তা বলেনি। আমরা আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।’

এই চেষ্টার পেছনে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব একটা কারণ হতে পারে জানিয়ে এই চক্রান্তের শিকার মো. মান্নান শেখ বলেন, ‘আমার সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। তারা এটি করে থাকতে পারে। তবে যারা ফাঁসানোর চেষ্টার সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের আগে থেকে চিনতাম না।’

হেয়ার এন্ড ফেয়ারে ইয়াবা ও বারুদ থাকার তথ্য কিভাবে পেয়েছিল এই প্রশ্নের জবাবে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (দক্ষিণ) মোহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, ‘আমাদের খুব বিশ্বস্ত একজন সোর্স এই তথ্য দিয়েছেন। তাকে বিভ্রান্ত করে এই কাজে ব্যবহার করেছিল ইফতেখার। সে বিষয়টা জানতো না। পরে তার সহযোগিতায় পুরো ঘটনা বেরিয়ে আসে।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print