সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো বন্ধ , বাড়ি ভাড়া দিয়ে সংসার চলছে খন্দকার মোশাররফের

প্রভাতী ডেস্ক : হতাশ না হয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

৭৩ বছর বয়সী এই বর্নাঢ্য রাজনীতিবিদ বলেন, ‘হতাশ হলে শারীরিক ও মানসিক দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। তাই দৈনন্দিন কার্যসূচি তৈরি করে ধর্ম-কর্মের পাশাপাশি ব্যায়াম, বই লেখা ও পড়া এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর অভ্যাস গড়ে তুলেছি। করোনার এই সময়টার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করছি।

রাজনীতি বিষয়ে তিনটি বই লেখার কাজ এগিয়ে চলছে। একটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই এটি প্রকাশিত হবে। অন্য দুটির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে।

কিছুটা আত্মতৃপ্তির সঙ্গে ড. মোশাররফ আরো বলেন, ‘একদিক থেকে আমি সমাজে অনেকের চেয়ে সৌভাগ্যবান। কারণ পাঁচ নাতি-নাতনিসহ পুরো পরিবার আমরা একই বিল্ডিংয়ে বসবাস করতে পারছি। বাজার আসছে অনলাইনে।

বাড়ির প্রধান ফটকসহ সব কিছুতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। কোনো ভিজিটর অ্যালাউড না।’

তিনি বলেন, ‘এর পরেও সীমাহীন খারাপ লাগা আছে। করোনার এই সময়ে নিজের আত্মীয়-স্বজনের পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের বড় একটা অংশ বেকার হয়ে গেছে।

এই বেকারত্বের চাপটা আমাদের ওপরেও আসছে। প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি এবং ছোটখাটো ব্যবসা যারা করতেন তাঁদের অবস্থা খুবই খারাপ।

অনেকের খাওয়া-পরা পর্যন্ত সমস্যা হয়ে গেছে। তাই সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তাঁদের অসুখ-বিসুখ এবং এই বিপদের সময়ে পাশে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

‘তবে ছোটখাটো কিছু ব্যবসা থাকলেও বর্তমান সরকারের সময়ে সেগুলো আর করা যাচ্ছে না। আস্তে আস্তে প্রায় সবই বন্ধ হয়ে গেছে।

অল্প কিছু বাড়ি ভাড়া দিয়ে সংসার চলছে’, আক্ষেপ করে বলেন সাবেক বিএনপি সরকারের তিন তিনবারের এই মন্ত্রী।

মন্ত্রী হওয়ার আগে শিক্ষাবিদ হিসেবে ড. খন্দকার মোশাররফের আরেক পরিচয় বেরিয়ে এলো আলাপের মধ্য দিয়েই।

১৯৬৪ সাল থেকে তিনি ছাত্রনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস), পরে মুহসীন হলের সহ-সভাপতি (ভিপি) ছিলেন।

১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন তিনি। ছিলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান। ১৯৯১ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে ড. মোশাররফ বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন।

এর মাঝে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী শিক্ষকদের গ্রুপ হিসেবে পরিচিত গোলাপি দলের সদস্য সচিবও ছিলেন।

করোনার এই সময়ে শিক্ষাবিদ হিসেবে নিজের উপলব্ধির কথা জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘গত চার মাসে স্কুলে না যাওয়া শিশু-কিশোর কিংবা ছাত্র-ছাত্রীদের মনোজগতে এক বিরাট পরিবর্তন লক্ষ করছি।

তাদের অনেকেই লেখা-পড়া বিমুখ হয়ে পড়ছে। ক্লাসমুখী শিক্ষা ও বহির্মুখী খেলাধুলায় তাদের ফিরিয়ে নেওয়া কিছুটা কষ্টকর হবে।

এক্ষেত্রে তিনি নিজের নাতিদের উদাহরণ টানেন। বলেন, ‘স্কুল থাকার স্বাভাবিক সময়ে ছেলে-মেয়েদের হাতে মা-বাবারা মোবাইল ফোন দিতেন না এবং ইন্টারনেটকেন্দ্রিক বিষয়গুলো নিরুৎসাহিত করা হতো।

কিন্তু এখন ইন্টারনেটকেন্দ্রিক নানা গেম, হ্যাশট্যাগ ও মোবাইলে তারা আসক্ত হয়ে পড়ছে। মা-বাবারা ইচ্ছা করলেও তাদের থামাতে পারছে না।’

করোনা পরিস্থিতিতে শহুরে মানুষের আরেক অভ্যাস বদলের কথাও তুলে ধরেন নিজের বাসার উদাহরণ দিয়ে। বলেন, ‘কেক, পিৎজাসহ যেসব খাবার আগে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে হতো, সেগুলো এখন ইউটিউব দেখে বাসায় তৈরি হচ্ছে। এটিও নতুন এক পরিবর্তন।’

তবে এই পরিবর্তন শুধু জীবনাচার, সমাজ কিংবা অর্থনীতির মধ্যে থেমে থাকবে না, বাংলাদেশসহ বিশ্বে রাজনৈতিক পরিবর্তনও অবশ্যাম্ভাবী বলে মনে করেন চার দশকের অভিজ্ঞ এই রাজনীতিক।

তিনি বলেন, ‘সনাতন পদ্ধতির বদলে রাজনীতি আরো আধুনিক ও ডিজিটাল এবং বাস্তবভিত্তিক হবে। বক্তৃতা এবং মাঠের রাজনীতির পরিবর্তন হবে।

সমগ্র বিশ্বে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বাংলাদেশেও উপলব্ধি এবং আত্মসমালোচনা শুরু করেছে। এ দেশের রাজনীতিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print