Search

মঙ্গলবার, ২২শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মঙ্গলবার, ২২শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, ২২শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

দূরত্ব বাড়ছে ১৪ দলে: প্রশাসন নির্ভরতায় একমত নয় শরিকরা !

প্রভাতী ডেস্ক : একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরে তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের প্রথম থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন শরিক দলের শীর্ষ নেতারা। সংসদ নির্বাচনে শরীকদের প্রার্থী সংখ্যা কমিয়ে দেয়া, নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভায় শরিকদের না রাখা, সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের প্রস্তাব এবং বিভিন্ন সময়ে সরকারে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না দেয়াসহ নানা কারণে জোটে টানাপোড়েন তৈরি হয়।

সম্প্রতি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতের ‘অব্যবস্থাপনায়’ আবারো ক্ষোভ বাড়ছে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে। এ নিয়েও ফের আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিকদের দূরত্ব বাড়ছে। জোটের তেমন কোনো কার্যক্রম না থাকায় কিছুদিন ধরেই প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের তীব্র সমালোচনা করছেন শরিক দলের শীর্ষ নেতারা। অনেক বিষয়ের সঙ্গেই ভিন্নমত পোষণ করছেন। দেশ পরিচালনায় প্রশাসননির্ভর ভূমিকারও সমালোচনা করছেন শরিকরা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বৃহস্পতিবার (২৬শে জুন) বলেছেন, এখন সবকিছু সরকারকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। আবার আওয়ামী লীগ কিন্তু দল ও সরকার আলাদা করেনি। পার্টি আর সরকার মিলে গেছে। আর ১৪ দলের ক্ষেত্রে- নাসিম সাহেব থাকতে তিনি অনেকটা গায়ের জোরে, ঠেলাঠেলি করে জোটের একটা অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। তার উদ্যোগেই এটা হয়েছে। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে ঢুকে গেছে। আলাদা কোনো অবস্থান নেই। ১৪ দলের অন্যরা তো (সরকারে) নেই। ফলে একটা ব্যবধান তো তৈরি হয়েই গেছে। তিনি বলেন, অন্যদিকে সরকারের দেশ চালানোর ক্ষেত্রে প্রশাসননির্ভর যে ভূমিকা, এতে ১৪ দলের অন্য শরিকরা একমত নয়। এতে দূরত্ব আরো বেগবান হয়েছে।

ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, দেশে করোনা বিস্তারের আগে আমরা অনেক সময় পেয়েছি। আমাদের অনুশীলন ও শিক্ষার দরকার ছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর সেই কাজটা করেনি। এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ।

তিনি বলেন, নাসিম ভাই থাকতে এ নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তাকে আমরা বলেছি, আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। সরকারের কাজের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে বেশি সম্পৃক্ত করা গেলে পরিস্থিতি আরো একটু নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত বলে মন্তব্য করেন এই নেতা।

এর আগে ১৪ দলের সংকট শক্ত হাতে সামলাচ্ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি নানাভাবে শরিকদের মান-অভিমানকে থামিয়ে রাখতেন। জোটের নেতাদের চাওয়া ও মনোভাব তুলে ধরতেন দলের হাইকমান্ডের কাছে। দিবস ও ইস্যুভিক্তিক কর্মসূচি নিয়েও মাঠে সরব থাকতেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর অনেকটা ‘হালছাড়া’ হয়ে গেছে ১৪ দল। তার মৃত্যুর পরে অনলাইন বা অফলাইনে একটা সভাও করতে দেখা যায়নি জোট নেতাদের।

এদিকে বৈঠক না থাকায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনাও করতে পারছেন না তারা। ফলে প্রকাশ্যে তীব্র সমালোচনা করছেন শরিক দলের নেতারা।

সম্প্রতি ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতের ‘অব্যবস্থাপনার’ তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, করোনা পুষে রেখে অর্থনীতি সচল হবে না, দুর্নীতি পুষে রেখে করোনা মোকাবেলা করা যাবে না। ক্যাসিনো বন্ধে যেভাবে বুলডোজার চালানো হয়েছিল, ঠিক তেমনভাবে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজদের ওপর বুলডোজার চালাতে হবে। একই সঙ্গে তিনি স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও ভয়ংকর দুর্নীতি দূর করার দাবি জানান।

১৪ দলের আরেক শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, আমাদের দেশে ৮ই মার্চ করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর তিন মাস আগে ধরা পড়ে চীনের উহানে। অর্থাৎ আমাদের প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের চরম ব্যর্থতা-উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে জনগণকে মাশুল দিতে হচ্ছে।

জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ১৪ দলের এখন সমস্যা হল সমন্বয়ক কে হবে, সেটা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে এটি নিয়ে আওয়ামী লীগ তৎপরতা শুরু করেছে। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে সমন্বয়ক ঠিক হয়ে গেলেই আমাদের কর্মকাণ্ড আবার শুরু হয়ে যাবে।

স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৃথিবীর দু-চারটা সরকার ছাড়া প্রায় সবাই তোপের মুখে। ফলে এটা এখানেও একটা ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print