প্রভাতী ডেস্ক : জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান পরলোকগমন করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার (১৪ মে) রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
তার মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। রাতে ফলাফলে জানা যায়, তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিলেন।
এর আগে বার্ধক্যজনিত সমস্যার কারণে গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি হন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সেখানে চিফ কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক খন্দকার কামরুল ইসলামের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। পরে ৩ মে চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (সিসিইউ) স্থানান্তর করেন।
কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ৯ মে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেও একই ধরনের সমস্যার কারণে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে একবার রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক, ভাষা সৈনিক , মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী, সংবিধানের অনুবাদক, দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলনের অগ্রবর্তী মানুষ।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই শিক্ষাবিদ ও লেখক ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলে থাকাবস্থাতেই ঢাকায় স্বপরিবারে চলে আসেন তিনি। তার বাবা এ টি এম মোয়াজ্জেম ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক।
১৯৫৬ ও ১৯৫৭ সালে স্নাতক সম্মান এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন আনিসুজ্জামান। অনার্সে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার কৃতিত্বস্বরূপ ‘নীলকান্ত সরকার স্বর্ণপদক’ বৃত্তিও লাভ করেন।
১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্র উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলন, রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী আন্দোলন এবং ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন।
এই ভূখণ্ডে ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদবিরোধী নানা আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে তার।
১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এই শিক্ষাবিদ। এছাড়া শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত গণআদালতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।
এই বিশিষ্ট লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে তার কর্মজীবন শেষ করে বর্তমানে অবসরে ছিলেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগ্রন্থ রয়েছে তার। গবেষক ও সাহিত্যিক হিসেবে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন।