প্রভাতী ডেস্ক: রোববার (৮মার্চ) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে চট্টগ্রামে যান। কর্মসূচির আড়ালে তিনি মূলত চট্টগ্রামের বিদ্রোহ দমন করতে গিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে এবার সেখানে বিদ্রোহের ছড়াছড়ি। এই বিদ্রোহী প্রার্থীদের শান্ত করতে এবং তারা যেন শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করে, সেজন্য তিনি বিদ্রোহীদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকেও মিলিত হয়েছিলেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা পারলেন না ওবায়দুল কাদের। কাদেরের অনুরোধ উপেক্ষা করে ১২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অনেক কঠিন হয়ে গেলো। কারণ বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরা এরই মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, যে ১২ জন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তারা প্রত্যেকে বর্তমান কাউন্সিলর। তারা এখনো বহাল রয়েছেন বলেই তারা এখন বিপদজনক। নানা রকম অভিযোগ থাকার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত মনোনয়ন বোর্ড এ প্রার্থীদের পরিবর্তন করে নতুন প্রার্থী দিয়েছিল।
কিন্তু মনোনয়ন বোর্ডের এই সিদ্ধান্তকে অমান্য করে এই ১২ জন প্রার্থী দাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে মাত্র দুইজন প্রার্থী দলের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন। এরা হলেন ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হোসেন হীরণ এবং ৫০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন।
এছাড়া বাকিরা যথারীতি প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। ওবায়দুল কাদের তাদেরকে যেমন বুঝিয়েছেন, তেমনি সতর্ক করেছেন। আবার শাস্তির ভয়ও দেখিয়েছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই কোনো কাজ হয়নি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশ কেন অমান্য করা হলো, সেটা বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল, উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনেও বিদ্রোহের ছড়াছড়ি ছিল।
সে সমস্ত বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে এবার চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনেও বিদ্রোহীরা মনে করছেন, বিদ্রোহী হলে কোন ক্ষতি হবে না। এমনিতেই চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনে চমক সৃষ্টি করেছে। মেয়র প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যদিও দেখা যাচ্ছে যে, বর্তমান মেয়র আজম নাছির মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, আজম নাছিরের কর্মীবাহিনী নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে।
একইভাবে অন্যপক্ষরাও রেজাউলকে সমর্থন করছে না। দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগের এই সংকটে মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন ১২জন বিদ্রোহী প্রার্থী। আওয়ামী লীগে গত কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের একমাত্র দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া কারো কথাই মানতে চান না আওয়ামী লীগের স্থানীয় তৃণমূল নেতৃবৃন্দ।
এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় উপদলীয় কোন্দল বিরোধ মেটানোর জন্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এই সমস্ত কোন্দল তো মেটাতে পারেনই নাই।
বরং নিজেরাই কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে। এবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মিশনই ব্যর্থ হলো। এখন আওয়ামী লীগের নেতাদেরই প্রশ্ন, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এবার কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে নাকি তারা এভাবেই কোন্দল বাড়াতে থাকবে?