মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩১শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

চট্টগ্রামে গার্মেন্টস মালিকের মেয়ের গায়ে হলুদের আয়োজনে দেড় হাজার শ্রমিক !

প্রভাতী ডেস্ক: চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকার শিল্পাঞ্চলের একটি কারখানা ইন্ডিপেন্ডেন্ট গার্মেন্টস। প্রতিদিনই এই কারখানার সেলাই মেশিনের টুকটাক শব্দ, গাড়ির হর্ন, শ্রমিকদের হাঁকডাক-সবমিলিয়ে জমজমাট থাকে পুরো এলাকা। পথচারী কিংবা আশপাশের লোকজন অভ্যস্ত গার্মেন্টস কারখানার পরিবেশে।

কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার (২রা ডিসেম্বর) সকালে চারদিকে ছিল সুনসান নীরবতা। শ্রমিকরা কাজে আসেননি। কোনো হইচইও নেই। এত বেলা তবুও কারখানায় আসছে না শ্রমিকরা। মে দিবস বা কোনো সরকারি ছুটিও তো নেই। তাহলে তারা কেন আসছেন না?

বেলা আরেকটু বাড়ার পরই পাওয়া গেল এর উত্তর। দলে দলে কারখানায় আসতে লাগলেন শ্রমিকরা। কিন্তু এ কী! সবাই হলুদ শাড়ি পড়ে আসছেন কেন? খোঁপায় এত ফুলই বা কেন লাগিয়েছেন গার্মেন্টস কর্মীরা! কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না আশপাশের, দোকানদার কিংবা অন্যান্য কারখানার লোকজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কারখানা মালিকের একমাত্র কন্যার গায়ে হলুদ। আর গায়ে হলুদের পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হবে গার্মেন্টস কন্যাদের দ্বারা। সত্যি সত্যি তাই হলো চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট গার্মেন্টসে। কোম্পানির মালিক, খ্যাতনামা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতা এবং নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব নিজের একমাত্র কন্যার গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করেছেন তার গার্মেন্টসের দেড় হাজার নারী শ্রমিককে সঙ্গে নিয়ে।

কারখানার সব নারী শ্রমিককেই তিনি দিয়েছেন হলুদ শাড়ি। যে শাড়িটি তিনি নিজের স্ত্রী ও স্বজনদের জন্য কিনেছেন, ঠিক একই শাড়ি কিনেছেন কারখানার দেড় হাজার শ্রমিকের জন্য। পুত্রসহ নিজে গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে যে পাঞ্জাবি পরেছেন, ঠিক একই পাঞ্জাবি দিয়েছেন গার্মেন্টসের পুরুষ শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের।

চট্টগ্রাম ক্লাবে বিয়ের অনুষ্ঠানে যেই বাবুর্চি রান্না করবেন, তাকে দিয়েই একই মেন্যুর রান্না পরিবেশিত হয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝে।

কারখানা সূত্রে জানা গেছে, গায়ে হলুদ উপলক্ষে গতকাল কারখানার সব শাখায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। গার্মেন্টসের ছাদের ওপর মঞ্চ করে আয়োজন করা হয় মালিককন্যার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। পুরো ছাদ জুড়ে ছিলেন শত শত নারী। সবাই গার্মেন্টস কন্যা। সবার পরনে একই শাড়ি। ব্যবসায়ী আবু তৈয়বের স্ত্রী উলফাতুন্নেছা পুতুলও একই শাড়ি পরে এসেছিলেন অনুষ্ঠানে।

এই দম্পতির একমাত্র কন্যা সাইকা তাফাননুম প্রীতির গায়ে হলুদ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চারদিকে যেন ছড়িয়ে পড়েছিল উচ্ছ্বাস। গার্মেন্টস কন্যারা সবাই ‘হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো’, ‘লীলাবালি লীলাবালি…সাজাইবো তোরে’ গানের তালে তালে যেভাবে সুন্দর করে নাচতেছিলেন, যে কেউ হয়তো বলবে তাদের কোনো সখী অথবা বোনের বিয়ে হচ্ছে। এস এম আবু তৈয়বের একমাত্র কন্যা প্রীতির বিয়ে হচ্ছে ঢাকার বারিধারার আসলাম মোল্লা ও রুবিনা মোল্লার পুত্র শফিউল ইসলাম মোল্লার (নিলয়) সঙ্গে।

আগামী রবিবার (৫ জানুয়ারি) নগরীর নেভি কনভেনশন সেন্টারে এই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিয়ে অনুষ্ঠানের আগে গতকাল দেড় হাজার গার্মেন্টস কন্যাকে নিয়ে প্রীতির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়। এতে গার্মেন্টস কন্যাদের সরব অংশগ্রহণ পুরো অনুষ্ঠানটিকে দিয়েছে আলাদা সৌন্দর্য।

একটা চমক ছিলো অনুষ্ঠানে, সেটা হলো সবকিছু ছাপিয়ে সবার ভালোবাসায় সিক্ত হলেন প্রীতি। গার্মেন্টস কন্যারা কেউ পঞ্চাশ টাকা, কেউ বিশ টাকা, কেউবা একশ টাকা চাঁদা দিয়ে নিজেদের মতো করে প্রীতিকে চমৎকার এক সেট স্বর্ণের গহনা উপহার দিয়েছেন। প্রায় দেড় লাখ টাকা দিয়ে কেনা সেই গহনা গার্মেন্টস কন্যারাই পরিয়ে দিয়েছেন মালিককন্যার গায়ে।

নিজের একমাত্র কন্যার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান গার্মেন্টসের ছাদে গার্মেন্টস কন্যাদের দিয়ে করানোর এই বিরল আয়োজনে ব্যাপারে এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘এটা প্রচারের জন্য নয়। গার্মেন্টস কারখানার এই খেটে খাওয়া শ্রমিকদের প্রচুর ভূমিকা রয়েছে আমার জন্য, আমার কন্যার জন্য, পুরো পরিবারের জন্য। এরাইতো রক্ত- ঘাম দিয়ে আমাকে এই অবস্থানে এনেছেন। আমার সন্তানকে একটি মর্যাদার আসন দিয়েছেন। আমি মনে করি, এরা আমার পরিবারের অংশ। তাই মেয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটি আমি তাদের সঙ্গে করেছি।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print